সামনের মরশুম শেষেই ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সম্পর্কে দাঁড়ি টানতে চান মেহতাব হোসেন। একটা সময় ছিল, ইস্টবেঙ্গল আর মেহতাব হোসেন সমার্থক হয়ে উঠেছিল। তারপর নদীখাতে বয়ে গেছে অনেক জল। সময় এগিয়েছে, পাক ধরেছে মেহতাবের দাড়িতে। ‘ঘরের ছেলে’ থেকে সমর্থকদের কাছে এখন ‘বুড়ো মেহতাব’।
দেখতে দেখতে লাল–হলুদ জার্সি গায়ে টানা ন’বছর খেলা হয়ে গেল। কিন্তু আর নয়। লাল–হলুদের মাঝমাঠের বিশ্বস্ত সৈনিক মনস্থির করে ফেলেছেন, সামনের মরশুমের পরই গা থেকে খুলে রাখবেন লাল–হলুদ জার্সি, তবে ফুটবলকে বিদায় না জানিয়ে। এ প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে গলা বুজে আসে মল্লিকপুরের মেহতাবের, ‘সামনের মরশুমটাই শেষবারের মতো ইস্টবেঙ্গলে খেলব। কিন্তু খেলা ছাড়ব না।’মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে, সেলাই নিয়েও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে মাঠে প্রাণপাত করেছেন। কী ডার্বি ম্যাচ, কী বাঁচা–মরার ম্যাচ, জান লড়িয়ে দিতে লাল–হলুদের ‘ভিকি’–র (মেহতাবের ডাকনাম) জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু মরশুম শেষে ট্রফি না পাওয়ার যন্ত্রণায় বিদ্ধ সমর্থকদের রোষানলের মুখে পড়তে হয়। ইস্টবেঙ্গলের কোচ চলে গেলেই, ‘কোচ তাড়ানোয়’ তঁার হাত ছিল বলেও অভিযোগও শুনতে হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মেহতাব হটাও’ স্লোগানে রীতিমতো অভিমানী ইস্টবেঙ্গল মিডিও। বলেন, ‘২০১১–’১২–তে সমর্থকরা এই আওয়াজ তুললে তাদের ধন্যবাদ জানাতাম। অন্য ক্লাবে চলে যাওয়ার সুযোগ ছিল। তখন অন্য ক্লাব থেকে ডাবল অর্থের প্রস্তাব পেয়েও যাইনি। শুধুমাত্র ভালবাসার টানে রয়ে গেছিলাম। মরার আগে পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের ভাল চাইব।’
সাফল্য না এলেই ‘টার্গেট মেহতাব’–যাতে বারবার বিস্মিত হতে হয়। মনে প্রশ্ন উঁকি দেয়, কেন? কী কারণে? সদ্য শেষ হওয়া লাল–হলুদ মরশুমের ৪০টা ম্যাচের মধ্যে ৩৫টা খেলেছেন। শেষ ম্যাচেও ১২০ মিনিট অবধি মাঠে ছিলেন। যদি সত্যিই বয়স কোনও প্লেয়ারের পারফরমেন্সে থাবা বসায়, তা হলে তিনি পারলেন কীভাবে? তার থেকেও বড় কথা মেহতাব বলেন, ‘অনেক কোচ এসেছে আর গেছে। সব কোচই আমাকে প্রথম দলে সুযোগ দিতেন। পারফরমেন্স না করলে দিতেন কেন?’ সঙ্গে জুড়লেন, ‘এই মরশুমে বিদেশিদের কী পারফরমেন্স ছিল এমন! কই ওদের নিয়ে তো কোনও কথা হচ্ছে না।’
বলতে বলতে দুম করে থেমে গেলেন। বলতে শুরু করলে কত কথাই না বেরিয়ে পড়বে। মনের ভেতরের আগুনে যে ছাই চাপা দিয়ে রেখেছেন। পরের মরশুমের পর চান না, নিজের ওপর দোষারোপের তীরের খোঁচা আর খেতে! তার থেকে লাল–হলুদকে ‘গুডবাই’ বলাই ভাল। মুখে না স্বীকার করলেও, মেহতাব চান আরও ৩ বছর ফুটবল খেলে তারপর কোচিং জগতে পা রাখতে।
No comments:
Post a Comment