মঙ্গলবার বিকেল তিনটেয় দিল্লির ফুটবল হাউসে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন আই লিগ এবং আই এস এলের সংযুক্তিকরণ নিয়ে আলোচনা সভা ডেকেছে। ওই সভায় আই লিগের ক্লাবগুলির প্রতিনিধি পাঠাতে বলেছে ফেডারেশন। দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাবগুলির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। এই লিগের সংযুক্তিকরণের জন্য অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়েছে। ওই কমিটিতে আছেন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল প্যাটেল, সচিব কুশল দাস আর আই লিগের সি ই ও সুনন্দ ধর।
কোনও ভাইস প্রেসিডেন্টদের ওই কমিটিতে রাখা হয়নি। আর আছেন আই এম জি আরের প্রতিনিধিরা। চুনী গোস্বামী, ভাইচুং ভুটিয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু ইংরাজি মাধ্যমের সাংবাদিকদের ডাকা হয়েছে। যদিও তাদের অধিকাংশরই ভারতীয় ফুটবল সম্বন্ধে সম্যক কোনও ধারণা নেই। জানা গেল, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন আই লিগের ক্লাবগুলির উপর বেশ নির্দয় আচরণ করতে চলেছে। আই লিগের তিন বা চারটি ক্লাবকে নতুন লিগে ফেডারেশন সুযোগ দিতে চায়। বেঙ্গালুরু আর ডি এস কে শিবাজিয়ান্স কর্পোরেট কোটার দল। বেঙ্গালুরু এফ সি ইতিমধ্যেই তিন বছরে নয় কোটি দিয়েছে। নতুন মরশুমে আরও তিন কোটি দেবে। প্রফুল্ল প্যাটেলের সঙ্গে বেঙ্গালুরু এফ সি’র মুখ্য কর্তা সজ্জন জিন্দালের সম্পর্ক বেশ ভালো। সংযুক্তিকরণের পর আই লিগের একটি দলও যদি থাকে তার নাম বেঙ্গালুরু এফ সি। এই ক্লাবটি গত তিন বছর ধরে ফুটবল হাউসের কর্তাদের অতি পছন্দের ক্লাব। ২০১৩-১৪ মরশুমের মতো এবারও বেঙ্গালুরু এফ সি ক্রীড়াসূচির সুবিধা পেয়েছে। বেঙ্গালুরু এফ সি, ইস্ট বেঙ্গল আর মোহন বাগান গত দুটি আই লিগে বেশ ভালো খেলেছে। তাই এই তিনটি দলকে ওয়াইল্ড কার্ড এন্টি দেওয়ার সম্ভাবনা উজ্জল। তবে এই ক্ষেত্রে প্রতি বছর তিন দলকে খরচ করতে হবে প্রায় ৩৭-৩৮ কোটি। এর মধ্যে দল গঠন হবে ২০ কোটি টাকায়। প্রতি বছর ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ১৫ কোটি । যা পাবে আই এম জি আর। তাছাড়া প্রচার ও অন্যান্য খরচ আছে। মোহন বাগানের বাজেট এখন ১০ কোটি। ইস্ট বেঙ্গলের কিছুটা বেশি। তাও আই এস এলে খেলোয়াড় পাঠিয়ে তারা প্রায় দুই কোটি বাঁচায়। এক ধাক্কায় মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গলের বাজেট বেড়ে তিন গুণ হয়ে যাবে। হাতে ১৪ মাস সময় আছে। এর মধ্যে মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গল ফান্ড যোগাড় করতে পারলে নতুন লিগে খেলবে। নয়তো তাদের খেলতে হবে লিগ ওয়ানে। ডেম্পো, সালগাওকর, লাজং, মুম্বই এফ সি’র স্থান ২০১৭-১৮ মরশুম থেকে হবে লিগ ওয়ানে। আর লিগ ওয়ানের পরের টিয়ার হচ্ছে লিগ টু। সেখানে স্থান হবে মহমেডান স্পোর্টিং, লোনস্টার কাশ্মীর, মিনার্ভা আকাদেমি, গুয়াহাটি এফ সি’র ক্লাবগুলি। মঙ্গলবারের সভায় চুনী গোস্বামী বা বাইচুং ভুটিয়াকে ডাকলেও তাঁদের বলার খুব বেশি কিছু নেই। শ্রোতার ভূমিকায় থাকতে হবে। মোহন বাগান তাই কোনও কর্মকর্তা না পাঠিয়ে পেইড স্টাফকে পাঠাচ্ছে। ইস্ট বেঙ্গলের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থাকছেন সহ সচিব ডা: এস আর দাশগুপ্ত। তিনি আগে দেখতে চাইছেন ফেডারেশন কী বক্তব্য রাখে তার উপর। শোনা যাচ্ছে মেজর সকার লিগ আর অস্ট্রেলিয়া লিগে রেলিগেশন নেই। নতুন লিগে যেহেতু প্রতি বছর ১৫ কোটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিতে হবে সেখানেও থাকবে না অবনমন। তাই মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গল লিগ ওয়ানে খেললে প্রমোশন পাবে না। এই সব নিয়ে ভারতীয় ফুটবলে এখন নানা গবেষণা চলছে। এমনও শোনা যাচ্ছে বাজেট তিন গুণ হয়ে গেলে অর্থ যোগাড় করতে না পারলে দুই প্রধানের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে আই এম জি আর। কিন্তু বিনিময়ে নিতে চাইছে ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ। এই ব্যাপারে কি রাজি হবেন দুই প্রধানের শীর্ষ কর্তারা? সেটাই আগামী ১৪ মাসে বোঝা যাবে। বলা যায়, মঙ্গলবার থেকেই মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গলের কঠিন লড়াই শুরু হয়ে যাচ্ছে। আই লিগের চার নম্বর দল হিসাবে নতুন লিগে খেলতে পারে শিবাজিয়ান্স। কারণ আগস্টে তাদের কাছ থেকে তিন কোটি পাবে ফেডারেশন। গত ডিসেম্বরে পেয়েছিল তিন কোটি। দেশের সেরা প্রতিযোগিতায় খেলতে গেলে ক্লাবগুলিকে কার্যত ‘তোলা’ দিতে হচ্ছে ফেডারেশন আর তার সহযোগী সংস্থাকে। এই রকম অবস্থা কোনও দেশে হয় না। চীনে এই ধাঁচের লিগ দাঁড়ায়নি। জাপানে কিন্তু আই লিগের ধাঁচের লিগ দাঁড়িয়েছিল। কোন পথে ভারতীয় ফুটবল যাবে তা আগামী ১৪ মাসে বোঝা যাবে। অনেকেই বলছেন, এটি ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহাসিক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে চলেছে। দেখা যাচ্ছে, এত দিন ধরে যে দলগুলি ভারতীয় ফুটবলকে বাঁচিয়ে রেখেছে, লাজং, আইজল এফ সি, রয়্যাল ওয়াহিংডো ভারতীয় ফুটবলে নতুন সাপ্লাই লাইন তৈরি করেছে। কিন্তু দুই লিগকে একত্রিত করতে গিয়ে সেই ক্লাবগুলিকে গলা টিপে হত্যা করছে ফেডারেশন।
No comments:
Post a Comment