তখন ইডেনে বৃষ্টি। মাঠের তদারকিতে সিএবি প্রেসিডেন্ট। শনিবার।-উৎপল সরকার |
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে মাঠে নামতেই হল।
চার বছর পর আবার কলকাতা বনাম কলকাতা।
চার বছর আগে মাঠে নেমেছিলেন তাঁর শহরের দল কেকেআরের বিরুদ্ধে, পুণে ওয়ারিয়র্সের ক্যাপ্টেন হিসেবে।
চার বছর ন’দিন পর ফের সেই ম্যাচ। কলকাতা বনাম পুণে। কলকাতা এক বনাম কলকাতা দুইয়ের লড়াইও বলা যায়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কিন্তু সেই মাঠে নামতেই হল।
কোনও দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে নয়। সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে। মুষলধারে বৃষ্টির পর মাঠের অবস্থা দেখতে। ম্যাচটা যাতে দ্রুত শুরু করা যায়, তার তদারকি করতে।
কেকেআর বনাম পুণে সুপারজায়ান্টস। কলকাতা বনাম কলকাতা। ধোনি বনাম গম্ভীর। নারিন বনাম জাম্পা।
এই ডুয়েলগুলো শেষ হওয়ার আগেই কিন্তু বৃষ্টির সঙ্গে ডুয়েলটা জিতে নিল টিম সৌরভ। দু’ঘন্টা তেইশ মিনিট বন্ধ থাকার পর যখন শনিবার রাতে শেষ পর্যন্ত তিনি ও তাঁর গ্রাউন্ডসম্যানরা ম্যাচ শুরু করে দিলেন। চার বছর আগে কেকেআরের বিরুদ্ধে জেতা হয়নি তাঁর পুণের। কিন্তু এ দিন জিতে হাসিমুখেই মাঠ ছড়লেন সিএবি প্রেসিডেন্ট।
শাহরুখ খান ছিলেন না। এসেছিলেন শুধু জুহি চাওলা। এলে তাঁর ভরা গ্যালারি দেখার ইচ্ছাপূরণ হত। বৃষ্টি নামার ঠিক আগে এক সিএবি র্শীষকর্তা উপস্থিতির যা হিসেব দিলেন, তা ৪৭,৮৪৩। এর মধ্যে অবশ্য ক্লাব হাউসের আমন্ত্রিতদের সংখ্যা ধরা নেই। পুলিশ সূত্রে জানা গেল, এগারো নম্বর গেটে আবার টিকিট পাঞ্চিং মেশিন বিকল হয়ে যাওয়ায় ঠিক কত লোক সেখানে ঢুকেছেন, তার পাকা হিসেব পাওয়া যায়নি। তবু সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার মানুষ এ দিন ছিলেন আইপিএলের ‘কলকাতা ডার্বি’ উপভোগ করতে।
চার বছর আগে ইডেনে সে দিনও কলকাতা ডার্বি ছিল। হয়তো বা আরও বেশি করে। সে দিনের সেই ‘বঙ্গভঙ্গ’ কি এখন আর মনে পড়ে সৌরভের?
শনিবার যখন খেলা শুরু হল, তখন তিনি সিএবি-র প্রেসিডেন্টস চেম্বারে। ঘরের বাইরে লাল আলো জ্বালিয়ে বৈঠক করছিলেন। ম্যাচটা নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ নেই নাকি তাঁর? “সৌরভ তো এখন ক্রিকেট কর্তা। তার আগ্রহ বরং ক্রিকেটের রাজনীতি নিয়ে বেশি। বোর্ডে যা চলছে”, বললেন এক বর্ষীয়ান সিএবি কর্তা। বোর্ড নিয়েই কি বৈঠক? তা নিয়ে অবশ্য ঝেড়ে কাশলেন না সৌরভ। কিন্তু সে দিনের সেই উন্মাদনার কথা যে মনে নেই, তা জানিয়ে দিলেন ক্লাব হাউসে দাঁড়িয়ে। বললেন, “এত চাপ, চার বছর আগের কথা ভুলেই গিয়েছি।” তাঁর টিমের শনিবারের ‘ম্যাচ’ জেতার প্রসঙ্গ তুলতে বরং বেশিই খুশি হলেন।
সৌরভের মতো গৌতম গম্ভীরের মুখেও জয়ের হাসি। ব্যাটসম্যান ধোনিকে ফিল্ডার দিয়ে ঘিরে ধরা প্রসঙ্গে বললেন, “কে ব্যাট করছে, তা দেখে তো আর ফিল্ডিং সাজাই না, বোলার দেখে সাজাই। আর নারিন, চাওলার উপর আমার যথেষ্ট আস্থা ছিল। আজ আমাদের পেসাররাও খুব ভাল বল করেছে। এখনও আমাদের অনেকটা দূর যেতে হবে। আশা করি চাপের মুহূর্তগুলো কাটিয়ে ম্যাচ জিতে যেতে পারব।”
তবে মাঝরাতে ইডেনে বোমাটা ফাটিয়ে গেলেন যিনি, তিনি পুণের কোচ স্টিভন ফ্লেমিং। সাফ বলে দিলেন, “ডাকওয়ার্থ-লুইস একটা ফালতু নিয়ম। টি-টোয়েন্টিতে এটা চলে না। বৃষ্টি না হলে, এমএস থাকলে আমাদের রানটা কোথায় যেত বলা মুশকিল। উইকেট যা স্লো, টার্নিং ছিল, তাতে ২০ ওভারে ১৩৫ তুলতে পারলেই স্কোরটা ভাল জায়গায় চলে যেত।” ধোনির তির্যক মন্তব্য, ‘‘চোট-টোট তো অনেক হয়েছে। শুধু ডাকওয়ার্থ-লুইসে হারাটাই বাকি ছিল আমাদের। সেটাও হয়ে গেল।’’
হারার পর রাগটা কি না পড়ল গিয়ে ফ্র্যাঙ্ক ডাকওয়ার্থ ও টনি লুইসের উপরই!
No comments:
Post a Comment