আজকালের প্রতিবেদন: ডিসেম্বরের হাড় কাঁপানো শীতের রাত। জবুথবু দিল্লি। লেপ-কম্বলে মুড়ে যখন আয়েসি ঘুমে আস্ত শহর, তখন একই শহরের, এক কোণে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছিল এক পরিবার। এক আঠেরোর ছেলে। একটু আগেই বাবাকে হারিয়েছে ছেলেটা। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে আচমকাই চলে গিয়েছেন পরিবারের অভিভাবক। মাত্র তো ৫৪। এই বয়সে কি চলে যাওয়ার কথা ছিল? কেন চলে গেল বাবা? কত কিছু তো বাকি ছিল, কত কথা বলার ছিল— শুনল না! কেন? এখন কী করবে? কী করা উচিত?
স্বপ্নগুলো হারিয়ে ফেলবে, নাকি আঁকড়ে ধরবে আরও বেশি করে? হাজার হাজার প্রশ্ন ছেলেটার মনে। যন্ত্রণা দলা পাকিয়ে গলার কাছে। আঠেরোর ছেলেটা কাঁদতে চাইছিল। পারছিল না। সারা রাত ছটফট করার পর, ভোরবেলা নম্বর ডায়াল করল একজনের। দিল্লি দলের কোচ স্যরের। জানিয়ে দিল, ‘স্যর, আজ মাঠে নামতে চাই।’ ‘বাবাকে হারানোর একদিনের মধ্যে মাঠে নামবে! তুমি ভেবে বলছ তো?’ চমকে গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন রেখেছিলেন স্যর। কিন্তু ছেলেটা অবিচল ছিল। সেদিনের সেই আঠেরো, আজকের সাতাশ। ভাগ্যিস আঠেরোর ছেলে সেদিন অবিচল ছিল। তা না হলে ভারত বিরাট কোহলিকে পেত কীভাবে? বাবার মৃত্যুর সেই রাতটা এখনও ভোলেননি বিরাট। কিন্তু জীবনে অত বড় আঘাতও তাঁকে ক্রিকেট থেকে দূরে নিয়ে যায়নি। উল্টে বাবা মারা যাওয়ার পরও, দিল্লির হয়ে ব্যাট করে ৯০ রান করেছিলেন। ফলো অনের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন দলকে। কীভাবে পেরেছিলেন নিজেকে সামলাতে? বিরাট জানিয়েছেন, ‘ওই রাতটা ভুলিনি। কী করে ভুলব? জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছিলাম। কিন্তু পরের দিন ভোরে মনে হল, আমার খেলা উচিত। ভেতর থেকেই তাগিদটা অনুভব করেছিলাম। দিল্লির কোচকে ফোন করেছিলাম ততক্ষণাৎ। বলেছিলাম, খেলতে চাই। মনে হয়েছিল, ক্রিকেট ম্যাচ শেষ না করে ফিরে আসা, থেমে যাওয়া অপরাধ। বিশ্বাস করুন, ওই মুহূর্ত থেকে আমি বদলে গিয়েছি। মানুষ হিসেবে বদলে গিয়েছি। আমার জীবনে ক্রিকেটের গুরুত্ব আলাদা। খেলাটাকে উচ্চ আসনেই স্থান দিয়েছি বরাবর।’
No comments:
Post a Comment