গোয়ায় সভা, কলকাতায় শনিবার |
ইস্ট-মোহনের পাশে দাঁড়াতে শনিবার সভা ডেকে দিল আইএফএ।
দিল্লি থেকে বুধবার সন্ধেয় গোয়া পৌঁছেই নিজেদের মধ্যে সভা করেছেন স্পোর্টিং ক্লুব এবং সালগাওকরের প্রধান কর্তারা। চূড়ান্ত কিছু হয়নি। ফেডারেশনের চব্বিশ ঘণ্টা আগের তুঘলকী বিষয়টা আরও খতিয়ে দেখে এগোতে চান আই লিগের এই দুই ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা।
মুম্বই এফসি এবং শিলং লাজংয়ের কর্তারাও নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালাচ্ছেন। সোজা কথায়, ফেডারেশনের প্রস্তাব জানার পর ক্লাবগুলোর কর্তাদের রাগ, ক্ষোভ ক্রমেই আগ্নেয়গিরির আকার নিলেও তাঁরা এখনও একজোট হতে পারেনি। যে যার নিজের মতো করে সমস্যা সামলানোর কথা ভাবছে। মোহনবাগানের মতো শতবর্ষ পেরোনো ক্লাবে আবার নিজেদের মধ্যেই তৈরি হয়েছে মতানৈক্য।
কুড়ি বছর ধরে চলা আই লিগকে কার্যত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে, মাত্র দু’বছরের মশালা টুনার্মেন্ট আইএসএলকে ফেডারেশন দেশের এক নম্বর ফুটবল টুর্নামেন্ট করে দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে। যা কোনও মতেই মেনে নিতে পারছেন না ক্লাব কর্তারা।
মঙ্গলবারের সভায় সবচেয়ে প্রতিবাদী চরিত্র স্পোর্টিং ক্লুব মালিক পিটার ভাজ এ দিনও যেমন বলেছেন, ‘‘ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তে ক্লাবগুলোই উঠে যাবে। ফেডারেশন শুধু টাকা চায়। এ তো ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত।’’ তেমনই ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বলে দিয়েছেন, ‘‘এটা হলে অন্যায় হবে। আমাদের মতো সমর্থকসমৃদ্ধ ক্লাবকে আইএসএল খেলতে হলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মতো টাকা দিতে হবে, এটা হয় না কি? আইএফএ সভা ডেকেছে। দেখি কী হয়। তার পর আমরা ক্লাবে সভা ডাকব।’’ গোয়ার ঐতিহ্যশলী ক্লাব সালগাওকরের সচিব অ্যাডলার ডি’ক্রুজ যে ক্ষিপ্ত বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ‘‘এটা হলে ভারতীয় ফুটবলের ক্ষতি হবে। খেলাটা পিছিয়ে যাবে।’’ আর বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে বাদ দিয়ে ওরা আইএসএল সফল করে দেখাক দেখি! প্রয়োজনে আমরা অন্য সব লিগ খেলব।’’ বাগান সচিব এ রকম বললেও তাঁর সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু অবশ্য সতর্ক। বললেন, ‘‘সবই তো প্রস্তাব। এখনও তো কিছু হয়নি। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’’
বাগান সহ-সচিব এখন এমন কিছু বলতে চান না যাতে ফেডারেশন কর্তারা রুষ্ট হন। শনিবারই ফেড কাপ ফাইনালে খেলবেন সনি-কাতসুমিরা। বেশি ‘বিপ্লবী’ হলে রেফারি গুয়াহাটিতে ‘মেরে’ দিতে পারেন তাঁদের টিমকে, এমন আশঙ্কা রয়েছে বাগান কর্তাদের একাংশের। আইএফএ এই ইস্যুতে শনিবারের সভা ডাকায় অবশ্য কটাক্ষ করছেন সৃঞ্জয়। বলে দিলেন, ‘‘ওটা টিভি চ্যানেলে মুখ দেখানোর সভা হবে। ওদের কী ক্ষমতা আছে? আইএফএ প্রেসিডেন্ট তো ফেডারেশনের সহ-সভাপতি। তিনি কী করতে তা হলে রয়েছেন?’’
আই লিগ চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি কর্তারা অবশ্য ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কারণ, তাঁরা চাইছেন, পনেরো বা পঁচিশ কোটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিয়ে আইএসএল খেলতে। ফলে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কথা বলে বিপদে পড়তে চান না সুনীল ছেত্রীদের ক্লাব। বুধবার দিনভর আই লিগের বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, পুরো ব্যাপারটা প্রস্তাব আকারে থাকায় তা নিয়ে নানা কথা বললেও ‘দল তুলে দেওয়া’ বা ‘মামলা করা’-র মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না কেউই। ইস্ট-মোহন কর্তারাও আশায় রয়েছেন শেষ পর্যন্ত জনপ্রিয়তা এবং দর্শক সমর্থনের কথা ভেবে তাদের আইএসএলে হয়তো নিয়ে নেওয়া হবে। আই লিগের সিইও সুনন্দ ধরের মন্তব্যে তা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। দিল্লি থেকে ফোনে তিনি বললেন, ‘‘আইএসএলে দু’টো টিম নেওয়া হবে ঠিক হয়েছে। কিন্তু কী শর্তে বা কত টাকা দিতে হবে তা নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। আর সবই তো প্রস্তাব। আলোচনা হবে।’’
কিন্তু ঘটনা হল ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট-সচিবরা সভা করলেও আসল রিমোট তো নীতা অম্বানীর কোম্পানির হাতে। তারা যা বলবে তাই-ই হবে। দেখার, ফেডারেশনের স্পনসর আইএমজি-রিল্যায়ান্স শেষ পর্যন্ত কী ফতোয়া দেয়!
No comments:
Post a Comment