ফেডারেশন কাপ ফাইনালের আগে ফুরফুরে মেজাজে মোহনবাগান শিবির। গতবারের মরশুমের শেষদিকের সঙ্গে এবারের অদ্ভুত মিল। বেঙ্গালুরু এফ সি–কে হারিয়ে মরশুমের শেষে আই লিগ ঘরে তুলেছিল সবুজ–মেরুন শিবির। এবার ফেডারেশন কাপ জিতে মরশুম শেষ করার সুযোগ সঞ্জয় সেনের দলের সামনে। আর সেটা কোনও মূল্যেই হাতছাড়া করতে চায় না তারা।
বুধবার সকালে নিজেদের মাঠের প্রস্তুতিতে চনমনে ভাবটা ধরা পড়েছে সনি, গ্লেন, কাৎসুমি, জেজে, দেবজিৎ, কিংশুকদের মধ্যে। কোচ সঞ্জয় মূলত এদিন জোর দেন বোঝাপড়া বাড়ানোয়। পরে সেট পিস অভ্যাস ও পেনাল্টি কিক মারার শেষে অনুশীলনে ছুটি। বাগান কোচ এদিনও বলেন, ‘সামনে আইজল বলে আত্মতুষ্টিতে ভোগার জায়গা নেই। বরং ফুটবলারদের সাবধান করে দিয়েছি। বলেছি, কঠিন প্রতিপক্ষ। সামান্য ভুলেই পদস্খলন হতে পারে। এতদিন কী খেললাম, কতটা ভাল খেললাম, এ–সব কেউ মনে রাখবে না, ট্রফি না জিতলে। আইজল সমীহ করার মতোই দল। ওদের ফুটবলারদের দৌড়, গতি, লড়াইকে মাথায় রেখেই খেলতে হবে।’ ট্রফি জয়ের লক্ষ্য স্থির রাখতে নিজে ও ফুটবলারদের কোচ সঞ্জয় ফেডারেশন কাপ ফাইনাল ছাড়া আর কোনও কিছু নিয়ে ভাবতে নিষেধ করেছেন। বলেন, ‘মরশুমের শুরু থেকে লক্ষ্য ছিল আই লিগ ও এ এফ সি কাপে ভাল কিছু করা। তখন ফেডারেশন কাপের খেলা হবে জানা ছিল না। আই লিগ জিতিনি ঠিকই, তবে খারাপ ফল হয়েছে এমন নয়। এ এফ সি কাপে নক আউটে ওঠার লক্ষ্যও সফল। তবু ট্রফি জয়ের স্বাদ আলাদা। সেটা ফেডারেশন কাপ জিতেই সম্ভব। তাই এখন ফেডারেশন কাপ ফাইনাল ছাড়া আর কিছু মাথায় নেই।’ দলের সেরা ভারতীয় স্ট্রাইকার জেজের মুখেও এক সুর। গত মরশুমে মোহনবাগানে যোগ দেওয়ার পর থেকে জেজের স্বপ্নের দৌড় চলছে সাফল্যের নিরিখে। সবুজ–মেরুন জার্সিতে আই লিগ জয়। চেন্নাইয়ান এফ সি–র হয়ে আই এস এল চ্যাম্পিয়ন। দেশের জার্সিতে সাফ কাপ প্রাপ্তি। এখন সামনে ফেডারেশন কাপ জেতার হাতছানি। জীবনের সেরা ফর্মে থাকা জেজের প্রতিক্রিয়া, ‘কোনওদিন এর আগে ফেডারেশন কাপ জিতিনি। তাই এবার জিততে মরিয়া। আই লিগটা অল্পের জন্য হাত ফসকে গেছে। ফেডারেশন কাপটা হাতছাড়া করতে চাই না। দল যেমন ছন্দে আছে, তাতে আশাপূরণের বিশ্বাস রাখি।’ মিজোরামের ছেলে জেজে। আইজল মিজোরামের দল। তাদের মুখোমুখি হলে অনুভূতি কেমন হবে? জেজের জবাব, ‘ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়েছিলাম বলে আই লিগের ম্যাচে আইজলের মুখোমুখি হইনি। এবার হব। আমি মিজোরামের ছেলে। আমার রাজ্যের দল ফাইনালে খেলবে। তার জন্য একটা আলাদা ভাল লাগা আছেই। কিন্তু পেশাদার ফুটবলার আমি। ট্রফি জেতার জন্য মোহনবাগান জার্সিতে বাড়তি আবেগ ঝেড়ে ফেলে মাঠে নেমে সেরা দিতে তৈরি। গোল পেলে ভাল, না পেলেও আসে যাবে না, দরকার ক্লাবের ঘরে ট্রফি আসা।’ মরশুম শেষে এবারও আই এস এলে চেন্নাইয়ান এফ সি–র হয়ে খেলবেন জেজে। তার পর ভাববেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান বা বেঙ্গালুরুর প্রস্তাব নিয়ে। মোহনবাগান রক্ষণের অন্যতম ভরসা লুসিয়ানো। এর আগে করিমের কোচিংয়ে সালগাঁওকারের হয়ে ফেডারেশন কাপ জিতেছিলেন ব্রাজিলীয় এই স্টপার। মোহনবাগানের হয়ে দ্বিতীয়বার ফেডারেশন কাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই শনিবার গুয়াহাটির মাঠে নামবেন তিনি। প্রতিপক্ষে কে আছে, কে নেই, সেটা ভাবছেন না লুসিয়ানো। তাঁর সাফ কথা, ‘আই লিগে ওদের কাছে আমরা হেরেছিলাম। এবার ওদের হারিয়ে বদলার সঙ্গে ট্রফিটাও চাই। আইজল লড়বে। ওদের ফুটবলারদের মধ্যে একটা নাছোড়বান্দা ভাব আছে। আইজলের ওপর কোনও প্রেশার নেই, আমাদের আছে। তবে আই লিগে আমরা পুরো শক্তি নিয়ে খেলতে পারিনি। এবার পারব। এটাই মানসিকভাবে আমাদের এগিয়ে রাখছে।’ আইজল কোচ জহর দাসও মানছেন সেটা। তাঁর মতে, ‘আই লিগে খেলা মোহনবাগানের সঙ্গে ফেডারেশন কাপ ফাইনালের বাগান দলের শক্তিতে আকাশ–পাতাল ফারাক। আই লিগে প্রথম দলের পাঁচ থেকে ছয়জন ফুটবলার ছিল না। এখন তারা থাকবে। সুতরাং লড়াইটা এবার অনেক বেশি কঠিন। মোহনবাগানকে আটকানো দুঃসাধ্য ব্যাপার যতই ভাল খেলুক না আমার ফুটবলাররা।’ এখানেই শেষ নয়, জহর দাস এও বলেছেন, মনে প্রাণে মোহনবাগানি আমি। যেখানেই থাকি না কেন, মোহনবাগানের সাফল্য কামনা করি। ট্রফি জিতলে খুশিই হই। এক্ষেত্রে আইজলের কোচ হিসেবে এটুকু বলতে পারি, আমার ফুটবলাররা ভাল ফুটবল উপহার দেবে, ফল কী হবে সেটা সময়ই বলবে।
No comments:
Post a Comment