দুই লিগকে এক করতে গিয়ে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন যদি মোহন বাগানকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিতে বাধ্য করে তবে মোহন বাগান আদালতে যাবে। আজ, মঙ্গলবার দুই লিগের সংযুক্তিকরণ নিয়ে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন দিল্লিতে সভা ডেকেছে। দুই লিগের সংযুক্তিকরণ নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গড়েছে ফেডারেশন। মঙ্গলবার সভায় থাকবেন আই এম জি আরের প্রতিনিধিরা। ভারতীয় ফুটবল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভার আগের দিন সবুজ মেরুনের এই খোলাখুলি বক্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
মোহন বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মোহন বাগান কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দেবে না। মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের ব্র্যান্ড ভ্যালু ঈর্ষনীয়। জনভিত্তি বিশাল। আই এস এলের খেলা ছ’টি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলি এখনও নিজেদের সাপোর্ট বেস তৈরি করতে পারেনি। স্টেডিয়াম ভরিয়ে তোলার জন্য ওদের মতো আমরা আই এফ এ’র মাধ্যমে কমপ্লিমেনটারি টিকিট গণহারে বন্টন করি না। হয়তো আমাদের সব ম্যাচে দর্শক সমাগম হয় না। তবে দল ভালো পারফরম্যান্স করলে যে মাঠে লোক হয় তা গত দুই বছর মোহন বাগানের ম্যাচগুলিতে প্রমাণিত। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি চ্যাম্পিয়নশিপ রানে থাকলেও বিভিন্ন স্পনসর, ম্যাচ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন এজেন্সির লোকজন আর স্পনসরের কোম্পানির জন্য বিশেষ ব্লক তৈরি করে দর্শক সমাগমের ব্যবস্থা করে। দুটি আই এস এলে প্রমাণ হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি নিজেদের সাপোর্ট বেস তৈরি করতে পারেনি। সংযুক্তিকরণের পর ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিতে বাধ্য করলে আমরা কিছুতেই দেব না। আশা করি, এই লড়াইয়ে ইস্ট বেঙ্গলকেও পাব। ফেডারেশন কী বলে তা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খতিয়ে দেখব। বুধবারই আমরা এই বক্তব্য জানিয়ে ফেডারেশনকে চিঠি দেব। বুধবার সকালে প্র্যাকটিসে যাব ফেড কাপ ফাইনালের আগে ফুটবলারদের উজ্জীবিত করতে। তখনই কমর্সমিতির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলব এই ব্যাপারে।’
সচিব আরও বলেন,‘ফেডারেশন ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের বাধ্য করলে আদালতে যাব। এই ব্যাপারে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট কোথাও যেতে আপত্তি নেই। আমরা ১২৭ বছরের ক্লাব। আই এফ এ’র প্রথম দিন থেকে আমরা নথিভুক্ত ক্লাব। ইস্ট বেঙ্গল ৯৬ বছরের নথিভুক্ত ক্লাব। ফেডারেশন কর্তাদের বুঝতে হবে বেঙ্গালুরু এফ সি, শিবাজিয়ান্সের সঙ্গে আমাদের অনেক ফারাক। আমাদের প্রস্তাবিত লিগ ওয়ানে খেলতে বাধ্য করলে আমরা রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হব। নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। আমাদের বিরুদ্ধে এইভাবে একতরফাভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিতে বাধ্য করলে কিংবা প্রমোশন না থাকা লিগ ওয়ানে খেলতে বললে ক্রীড়ামন্ত্রী আর মুখ্যমন্ত্রীকে বলব আই এস এলের জন্য বাংলার কোনও স্টেডিয়াম না দিতে। রাজ্য সরকার ক্লাবগুলির দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে গত পাঁচ বছর। তাই এই বৃহত্তর লড়াইয়ে আমরা রাজ্য সরকারকে পাব বলেই আশা করছি। ঘটনা হল, নতুন লিগে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ১৫ কোটি টাকা।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি নিয়ে মোহন বাগান সচিবের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ ভাবে সমর্থন করেছেন ইস্ট বেঙ্গল সহ সচিব ডাঃ এস আর দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘অঞ্জনবাবুর বক্তব্য একদম ঠিক। ইস্ট বেঙ্গল- মোহন বাগানের ব্র্যান্ড ভ্যালুই তো ফ্র্যাঞ্চাইজির ফি’র সমান। এই ভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যায় না। মোহন বাগান প্রতিনিধির সঙ্গে সভার আগেই কথা বলে এক সুরেই বক্তব্য রাখব।’ উল্লেখ্য, ফেডারেশনের সংযুক্তিকরণের প্রাথমিক ব্যাপারটি লাল হলুদ সহ সচিবই দেখছেন।
মহমেডান সভাপতি সুলতান আমেদ নির্বাচনের এক্সিট পোলের রেজাল্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তার ফাঁকেই বললেন,‘ দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগে আমাদের উপর অবিচার হল। ওরা চায় না আমরা আই লিগে উঠি। এবার তো মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গলের দিকেও হাত বাড়াচ্ছে। মোহন সচিবের বক্তব্যর সঙ্গে আমি একমত। আমরাও একযোগে সভায় বক্তব্য রাখতে চাই। তবে সুযোগ মিলবে কিনা জানি না। শুনছি মঙ্গলবারের সভায় ক্লাব প্রতিনিধিরা সবাই শ্রোতা। কর্পোরেট ধাঁচে স্রেফ প্রোজেকশন দেখার সুযোগ পাবেন তাঁরা।’ তাই বাংলার রাজনীতিতে সি পি এম আর কংগ্রেসের জোটের মতোই তিন প্রধান প্রায় দুই দশক বাদে জোট বাঁধতে চলেছে। দুই দশক আগে জোট বেঁধে এই তিন ক্লাব ঘেরা মাঠগুলি থেকে ক্রিকেট খেলার চির বিদায়ের ব্যবস্থাটি করে ফেলেছিল সফলভাবে। কারণ ক্রিকেট পিচের জন্য তিন ঘেরা মাঠে সেন্টার সার্কেলের অবস্থা খুবই করুণ হত। সেই জোটই কলকাতা লিগের তিন বড় ম্যাচে সদস্যদের বিনা পয়সায় খেলা দেখার দাবি ছিনিয়ে আনে। সেই জোটের পুরোধা পুরুষ ছিলেন মোহন সচিব। এবার অসুস্থ শরীরেও তিনি সোমবার থেকে ‘মাঠে’ নেমেছেন। কারণ ১৫ কোটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি না দিলে দুই প্রধানকে লিগ ওয়ানে নামিয়ে দেওয়ার সুনির্দিষ্ট খবর এবং প্রস্তাবিত লিগ ওয়ানে প্রোমোশন না থাকার ব্যাপারটি এদিনই প্রকাশিত হয়।
No comments:
Post a Comment