কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় পোস্তিগা, হিউমদের মারা গোলমুখী শট বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন শিল্টন। কিংবা সনি নর্ডি, সুনীল ছেত্রী, আনেলকাকে রুখে দিচ্ছেন শুভাশিস রায়চৌধুরী বা সুব্রত পাল। ভিআইপি বক্সে দলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন এক দিকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তো অন্য দিকে শচীন তেণ্ডুলকর বা অভিষেক বচ্চনরা।
এমন সব দৃশ্যের কোলাজ উঠে আসতে পারে আসন্ন ইন্ডিয়ান সুপার লিগ বা আইএসএল মরসুমেই। সৌজন্যে আইএসএল-এর মূল আয়োজক রিলায়েন্স-আইএমজি-স্টার। যুবভারতীর বিকল্প মাঠ হিসেবে শিলিগুড়িকে অ্যাটলেটিকোর হোম মাঠ হিসেবে বেছে নেওয়াতেই এই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় স্তরের আইলিগ-ফেডারেশন কাপের ম্যাচ এখন শিলিগুড়ি তথা উত্তরের ফুটবলপ্রেমীরা দেখেছেন। স্বাদ বদলে একেবারে আন্তর্জাতিক স্তরের ফুটবলের স্বাদ এনে দিতে পারে রিলায়েন্স-আইএমজি-স্টারের উদ্যোগ। শিলিগুড়িতে কাঞ্চনজঙ্গা স্টেডিয়ামে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের কয়েকটি ম্যাচ আয়োজন করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে আইএসএল কর্তৃপক্ষের তরফে। ব্যপারটি এখন শুধু চিন্তাভাবনার স্তরেই আটকে নেই, তা কাজে পরিণত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রিলায়েন্স কর্তারা এপ্রিলেই ইতিমধ্যে দু’বার শিলিগুড়ি ঘুরে গিয়েছেন নিঃশব্দেই। দেখে গিয়েছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঠও। আইএসএল কর্তৃপক্ষের আসার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ কর্তারাও। ফলে আন্তর্জাতিক ফুটবল দেখার আশায় বুক বাঁধছেন ফুটবলপ্রেমীরা।
শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ সচিব অরূপরতন ঘোষ বলেন, ‘‘আইএসএল কর্তৃপক্ষ মূলত শিলিগুড়ির অবস্থানকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেই আকর্ষণ থেকেই মূলত এখানে ম্যাচের পরিকল্পনা করছেন।’’
তবে ক্রীড়া পরিষদ সবচেয়ে আশাবাদী আইএসএল কর্তৃপক্ষ ম্যাচ আয়োজন করলে মাঠের ভোল বদলে দেবেন তাঁরাই। এমনই প্রতিশ্রুতি মিলেছে কর্তৃপক্ষের তরফে। স্টেডিয়াম কমিটির পক্ষ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিয়ে তাঁরা কাজ করবেন। মাঠ থেকে গ্যালারি সমস্ত দায়িত্ব নেবেন তাঁরা বলে জানিয়েছেন। আইএসএলের বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম কর্তা শঙ্কর ধর শিলিগুড়িতেই অ্যাটলেটিকোর ম্যাচ আয়োজনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যা পরিস্থিতি যুবভারতী পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তাই আমরা শিলিগুড়িকে তৈরি করে রাখতে চাইছি। যুবভারতী না পাওয়া গেলে কাঞ্চনজঙ্ঘায় অ্যাটলেটিকোর হোম ম্যাচে করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ পরিকাঠামো তাঁরাই বদলে দেবেন, জানান তিনি।
হঠাৎ এমন খবরে খুশির হাওয়া শিলিগুড়িতে। শিলিগুড়ির প্রাক্তন ফুটবলার তথা কোচ কবি সরকারের মতে এমন মাপের খেলা এখানে হলে মানুষের মধ্যে উৎসাহ বাড়বে। কলকাতা ছাড়াও বাংলায় ফুটবল নিয়ে উৎসাহ কেমন তা জানতে পারবেন দেশী-বিদেশী ফুটবলার-কোচরাও। তিনি বলেন, ‘‘এতে সমৃদ্ধ হবে শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের ফুটবলই।’’ এ লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোচ জয়ব্রত ঘোষও এমন খেলার সম্ভাবনায় উৎসাহী। তাঁর মতে, ‘‘যত আন্তর্জাতিক তারকাদের খেলা সামনে থেকে দেখতে পাবে মানুষ ততই সাধারণ ফুটবলপ্রেমী থেকে শুরু করে উঠতি খেলোয়াড়দেরও উৎসাহ বাড়বে। এমন সুযোগ তো রোজ আসে না।’’ যুবভারতী চালু হয়ে গেলে এখানে ম্যাচ না-ও পড়তে পারে। কিন্তু একবার সফল মাঠ হিসেবে কর্তৃপক্ষের গুডবুকে উঠে যায় তা হলে সুযোগ আসতেও পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এর আগে আইলিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের পর এবার প্রথম ডিভিশনের আই লিগেরও ম্যাচ হয়েছে। গতবার ফেডারেশন কাপের একটা গোটা লেগের খেলা পড়েছে এখানে। এবারেও ফেডারেশন কাপের বেশ কিছু ম্যাচের প্রস্তাব এলেও বিধানসভা নির্বাচনের কারণে বহু ম্যাচ নেওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের কয়েকটি ম্যাচ এখানে হওয়ার কথা রয়েছে। এরপরে আইএসএল মাঠে নামলে শিলিগুড়ি ফুটবলে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠবে অচিরেই।
No comments:
Post a Comment