Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Monday, May 23, 2016

পরের মরসুমেও বাগান কোচ সঞ্জয় । রতন চক্রবর্তী - আনন্দবাজার

ফেড কাপ ফাইনালে পাঁচ গোলের ইতিহাস তৈরি করার পর তাঁর মোবাইলের মেসেজ বক্সে উপচে পড়ছে একইসঙ্গে শুভেচ্ছা, আফসোস আর আকুতি। শ্যাম থাপা আর নিমাই গোস্বামী ছাড়া কোনও প্রাক্তন মোহনবাগান ফুটবলারের অভিনন্দন বার্তা পাননি। সবই সবুজ-মেরুন সদস্য-সমর্থকদের।

কিন্তু আইজলকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার শুভেচ্ছা, অল্পের জন্য আই লিগ হাতছাড়া হওয়ার আফসোস এবং কোচের পদ ছেড়ে না দেওয়ার অনুরোধ ভেতরে ভেতরে নাড়িয়ে দিচ্ছে সাম্প্রতিককালের  সফলতম বাঙালি ফুটবল কোচকে। এতটাই যে, ক্লাব কর্তাদের থেকে পরের মরসুমেও কোচ থেকে যাওয়ার প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে তাতে সম্মতি দিয়ে দেওয়ার পরে নিজের জন্য নতুন মাইলফলকও ঠিক করে ফেললেন সঞ্জয় সেন।
রবিবার সকালে কামাখ্যা মন্দিরে পুজো দিয়ে আসার পর টিম হোটেলে বসে বাগান কোচ বলে দিলেন, ‘‘আর্মান্দো কোলাসো এখন আমার টার্গেট। ও ডেম্পোকে পাঁচ বার আই লিগ জিতিয়েছে। এ বার পারিনি। পরের বছর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মোহনবাগানকে সেই রেকর্ড স্পর্শ করাতে চাই।’’ জাতীয়-আই লিগ ধরে সবুজ-মেরুন চার বারের চ্যাম্পিয়ন। আর সে জন্যই পরের মরসুমের পছন্দের টিম লিস্ট ক্লাব কর্তাদের না দিলেও তাঁদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান দলটাকেই ধরে রাখতে। ‘‘এ রকম ব্যালান্সড সাইড আর শান্তির ড্রেসিংরুম থাকলে পরের বার আই লিগ জিতবই আমরা,’’ বললেন মাত্র দু’বছর কোচিং করিয়ে বাগানকে আই লিগ এবং ফেড কাপ দেওয়া কোচ।
দু’দিন পরেই এখানে এএফসি কাপ প্রি-কোয়ার্টার খেলবে সঞ্জয়ের বাগান। সনি নর্ডি তাঁর দেশের হয়ে খেলতে এ দিনই কলকাতা হয়ে হাইতি ফিরে গেলেন। চোটের জন্য কাতসুমিও গুয়াহাটি ছাড়লেন আজ। প্রীতম কোটালের পায়ে তিনটে সেলাই পড়েছে শনিবারের ফে়ড কাপ ফাইনালের পর। তিনিও খেলতে পারবেন না মঙ্গলবার টাম্পাইন্স রোভার্সের বিরুদ্ধে। কলকাতা থেকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে নতুন তিন ফুটবলারকে। কিন্তু এ সবের মধ্যেই পরের মরসুমের রোডম্যাপ তৈরি করা শুরু করে দিয়েছেন বাগান কোচ। ‘‘এই  স্কোয়াডে সামান্যই কিছু পরিবর্তন করার ইচ্ছে আছে। এএফসি কাপের পর চার মাস সময় পাব। কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে, ক্লাবের বাজেট জেনে যা করার করব। তবে মোহনবাগান কর্তাদের সঙ্গে আমি একমত যে, কলকাতা লিগ খেলার জন্য তিন কোটি টাকা খরচের কোনও মানে হয় না,’’ বললেন সঞ্জয়। 
ক্লাবের আর্থিক  সমস্যা প্রবল। নতুন স্পনসর আনার মরিয়া চেষ্টা চলছে। প্রধান কর্তাদের মধ্যে চলছে নানা ঝামেলা, মতভেদও। গুয়াহাটি ছাড়ার আগে সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু তা আরও উস্কে দিয়ে গেলেন এই বলে যে, ‘‘মরসুমের শুরুতে আমাদেরই কেউ কেউ বলেছিলেন স্পনসর না থাকলে ভাল টিম করার দরকার নেই। সেটা হলে কি ফেড কাপটা আসত? টিমটা ইতিহাস গড়ত? পারত এত ভাল খেলতে? প্রেসিডেন্ট এই ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন এবং টাকা দিয়েছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’’ সৃঞ্জয় নাম না বললেও ক্লাবের অন্দরের খবর, লক্ষ্যটা অসুস্থ সচিব অঞ্জন মিত্র!
কিন্তু এ সব নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাতে রাজি নন কোচ সঞ্জয়। বাগানের কোচ বদল করার রেওয়াজ থামিয়ে টানা তিন বার তাঁর উপর আস্থা রাখছেন কর্তারা। এটাকেই বরং গুরুত্ব দিচ্ছেন বঙ্গসন্তান কোচ এ মরসুমের পেমেন্ট বকেয়া থাকা সত্ত্বেও। ১২৫ বছর পেরোনো ক্লাবে এর আগে টানা তিন মরসুম বা তার বেশি কোচিং করিয়েছেন মাত্র তিনজন। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল দত্ত এবং সুব্রত ভট্টাচার্য। তেরো বছর আগে সুব্রতকে সরানোর পর বাগান কোচের পদ মিউজিক্যাল চেয়ারে পরিণত হয়েছিল। দু’বছরে দু’টো জাতীয় ট্রফি বাগানে এনে সেই ট্র্যা়ডিশনে ছেদ ফেললেন সঞ্জয়।
সঞ্জয় কোচের পদে থেকে গেলেও তাঁর বেশ কিছু ফুটবলারের দিকে কিন্তু নজর রয়েছে দেশের প্রায় সব বড় ক্লাবের। টিম বাগানের আশি ভাগ ফুটবলার আইএসএলে ক্লাব পেয়ে গিয়েছেন। প্রীতম কোটালের সঙ্গে আটলেটিকো কলকাতার চুক্তি প্রায় পাকা। সবচেয়ে বেশি ক্লাবের অফার আছে এ মরসুমে কুড়ি গোল করা জেজের জন্য। বাগান কোচ জেজেকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। ‘‘ওর এই উত্থান আমাকে অবাক করেছে। প্রচণ্ড পরিশ্রমী। আমার প্র্যাকটিসের পরেও প্রায় রোজই অন্তত আরও পনেরো মিনিট আলাদা প্র্যাকটিস করে জেজে। যার সুফল পাচ্ছে।’’
ফে়ড কাপ ফাইনালে তাঁর দলের পাঁচ গোলের মধ্যে সঞ্জয় সেরা বলছেন, জেজের প্রথম গোলটাকে। ‘‘পেরিফেরাল ভিশন দুর্দান্ত না হলে এ রকম গোল করা যায় না। অনবদ্য। কর্নেলের ব্যাকহিলটা যে ভাবে গোলে রাখল!’’ এ মরসুমে বাগানের তিন সেরা ফুটবলার বাছতে গিয়ে দলের কোচ সনির চেয়েও এগিয়ে রাখলেন জেজেকে। সঞ্জয়ের তালিকায় সনি থাকছেন দু’নম্বরে। তিন নম্বরে বিক্রমজিৎ। যা শুনে স্বয়ং জেজের এ দিন প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি শুধু বক্সের সামনের স্ট্রাইকার হয়ে থাকতে চাই না। নিজের খেলায় আরও বৈচিত্র আনতে চাই।’’
বাগানের নতুন স্বদেশি গোলমেশিন রবিবার দুপুরে চার্চে গিয়েছিলেন প্রার্থনা করতে। সূত্রের খবর, দেখা করতে গিয়েছিলেন জাতীয় কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের সঙ্গেও। এশিয়া কাপ কোয়ালিফাইং ম্যাচের জন্য জাতীয় দলের শিবির চলছে এখানে। মঙ্গলবার ক্লাবের দায়িত্ব চুকিয়েই সেখানে যোগ দিতে হবে জেজে-প্রণয়দের।
বাগান এ দিন হোটেল পরিবর্তন করল। ট্রফি জিতলে সাধারণত তা রাখা থাকে হোটেলের লবিতে। চব্বিশ ঘণ্টা আগে জেতা ফেড কাপ অবশ্য দলের ডাক্তারের ঘরে বন্দি। সেখানে গিয়ে কর্নেল-কাতসুমি-প্রণয়দের সেলফি তুলতে হচ্ছে। তবে টুর্নামেন্টের ফাইনালে রেকর্ড গড়ার পরের দিন বাগান টিম হোটেল অদ্ভুত রকম শান্ত। আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেই এএফসি কাপের শেষ আটে ওঠার লড়াই। সিঙ্গাপুরের ক্লাবের সঙ্গে যুদ্ধে বাগান টিমটা এতটাই ফোকাসড যে, কোচের ঘরে এসে জেজে বলে গেলেন, ‘‘মঙ্গলবার সনি নেই। আমরা বাড়তি দায়িত্ব নেব। জিততেই হবে।’’
জেজের মনোভাবেই স্পষ্ট— কেন পরের বারও এই টিমটাকেই বাগানে সাজাতে চাইছেন সঞ্জয় সেন।

No comments:

Post a Comment