সম্বরণ ব্যানার্জি: কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে ছিল ক্রাঞ্চ ম্যাচ। আর সেই ম্যাচেই অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরের জুয়াটা কাজে লেগে গেল। কীভাবে? ম্যাচটা ছিল বিকেল ৪টে থেকে। রাত ৮টা থেকে নয়। বিকেলের উইকেট আর রাতের উইকেটের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই ফারাক থাকে। এমনিতেই তিনদিন ধরে ঢাকা ছিল ইডেনের পিচ। কভার তোলার পর উইকেটের চরিত্র ছিল অনেকটা স্পঞ্জি। সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গম্ভীর। ফর্মে থাকা পীযূষ চাওলাকে বসিয়ে দলে নিল কুলদীপ যাদবকে। আর এই ফাটকাটাই কাজে লেগে গেল।
নাইটদের বিরুদ্ধে ১৭২ রান তাড়া করতে গিয়ে সানরাইজার্সের শিখর ধাওয়ান যখন সাবলীল ছন্দে বিচরণ করছে উইকেটে, তখনই মোক্ষম ধাক্কা দিয়েছে কুলদীপ। নিজের দ্বিতীয় ওভারে আউট করল ধাওয়ানকে। পরে কুলদীপ আরও একটা উইকেট নিয়েছে কেন উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে। চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ এদিন উইকেট থেকে যথেষ্ট টার্ন পেয়েছে। বিকেলে ম্যাচ হওয়ার জন্য চাওলার পরিবর্তে কুলদীপকে নেওয়া, হোমওয়ার্কটা ভালই করেছে গম্ভীর। বোলার অঙ্কিত রাজপুতকেও ইম্প্রেসিভ লাগছে।মণীশ পান্ডের কথায় আসি। অসাধারণ খেলছে ছেলেটা। প্রতিটা ম্যাচে ও দলের রানকে দারুণ জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে। এদিনও মণীশ যখন খেলতে নামল, নাইটদের রান ৩ উইকেটে ৫৭। এই অবস্থা থেকে দলকে টানল ইউসুফ পাঠানকে সঙ্গে নিয়ে। ওই সময়ে যদি কেউ একজন আউট হয়ে যেত, সেক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারত নাইটরা। মণীশ সত্যিই কমপ্যাক্ট ক্রিকেটার। ব্যাটিংয়ের হাত যেমন ভাল, ফিল্ডিংটাও ভাল করে। আমার তো মনে হয়, ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের জায়গা পাকা করার দিকে ক্রমশ এগোচ্ছে মণীশ। ভারতীয় দলের জন্য ও আইডল।
গম্ভীর ব্রিগেডকে এদিন জিততেই হত। তারা জিতেছে। তাই ম্যাচটা নিয়ে খুব বেশি কাটাছেঁড়া হবে না। উইকেটের কথা চিন্তা করে কুলদীপের সঙ্গে সাকিব, নারাইনকে খেলানোও পারফেক্ট সিলেকশন। যদিও একটা কথা না লিখে পারছি না। সূর্যকুমার যাদব কি আট নম্বরে নামার মতো প্লেয়ার? ওকে অবশ্যই আগে নামানো যেত।
সানরাইজার্স হেরে গেছে। কিন্তু ওদের বোলার মুস্তাফিজুর রহমানের কথা আলাদা করে উল্লেখ করব। যে ম্যাচই হোক, পরিস্থিতি যা–ই হোক না কেন, ফোকাস ঠিক রেখে যাচ্ছে মুস্তাফিজুর। স্লোয়ারের সঙ্গে ইয়র্কার মিশিয়ে যেভাবে বোলিং করে, এই বয়সে সেটা অবিশ্বাস্য! যদি নিজেকে ধরে রাখতে পারে, তাহলে বাংলাদেশি এই বোলারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
শিখর ধাওয়ানের কথা আগেই কিছুটা বলেছি। ক্রিকেটের যে কোনও ফরম্যাটেই ও আধিপত্য বজায় রাখতে পারে। দাপট নিয়ে খেলত পারে। রবিবারও ঝোড়ো গতিতে অর্ধশতরান করে ফেলল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে কুলদীপের বলে ওইভাবে মারতে যাওয়া ঠিক হয়নি ধাওয়ানের। ওর আউট খেসারত দিতে হল সানরাইজার্সকে। যুবরাজের ব্যাপারে বলব, সেই পুরনো যুবিকে পাওয়া কঠিন। দু-তিনটে ছয় হয়ত ও মেরে দিতে পারবে, কিন্তু ধোনির মতোই ওর ব্যাটিং গ্রাফ নামছে।
এবারের আই পি এলে ইডেনে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলল কলকাতা নাইট রাইডার্স। নকআউট পর্বে গম্ভীররা নিজেদের দর্শকদের পাবে না। কিন্তু এটাও ঠিক, এভাবে খেলা চালিয়ে যেতে পারলে নাইটদের নিয়ে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।
No comments:
Post a Comment