Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Tuesday, May 17, 2016

ক্রিকেটকে বদলে দিয়ে থামতে চান কোহালি । আনন্দবাজার

জীবনের ফর্ম চলছে?
অসাধারণ চলছে বলতে পারবেন। কিন্তু ফর্মের শিখরে কি না জানেন না।
সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে তুলনা?
অর্থহীন মনে হয়। শুনলে নিজেরই বিব্রত লাগে।
কেরিয়ারের শেষ দিন নিজেকে কী ভাবে দেখতে চান?
অসাধারণ ক্রিকেটার হিসেবে অবশ্যই। যে খেলাটায় বদল এনে দিয়েছে। কিন্তু থাকতে চান দুর্দান্ত এক মানুষ হিসেবেও।
অন্য কেউ নন, কথাগুলো বিরাট কোহালি বলছেন। স্বপ্নের ব্যাটিং ফর্মের সরণিতে হাঁটতে থাকা বিরাট কোহালি বলছেন।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে যে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং শুরু করেছেন, আইপিএলের শেষ লগ্নে পৌঁছেও তা থামেনি। বরং দিন দিন আরও মারাত্মক দেখাচ্ছে কিংগ কোহালিকে। গত রাতকেই ধরা যাক। ক্রিস গেইল, এবি ডে’ভিলিয়ার্স দুর্দান্ত খেলেছেন। কিন্তু তাঁর মতো হাতে চোট নিয়ে তো খেলেননি। তবু বিরাট বলবেন না, এটাই তাঁর ফর্ম-শিখর। বলবেন অত কিছু না ভেবে শুধু এই সময়টুকু, এই ফর্ম উপভোগ করে যেতে।
‘‘জানি না এটাই আমার পিক কী না। তবে ভেতরে ভেতরে বুঝতে পারছি যে, গত কয়েক মাস ধরে এটা চলছে। আইপিএলে অনেক কোচও জিজ্ঞেস করেছেন এটাই আমার সেরা ফর্ম কি না। এটুকু বলব, এখন যতটা ভাল বল হিট করতে পারছি, আর কখনও পারিনি,’’ টিভি সাক্ষাৎকারে মঙ্গলবার বলে দিয়েছেন বিরাট। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘এখন যতটা শান্ত থাকতে পারি, নিজেকে যতটা ঠান্ডা রাখতে পারি, আগে কখনও পারিনি। তাই এখন অত ভাবব কেন? বরং এই সময়টাকে উপভোগ করব।’’
নিজে শান্ত আছেন কি না, মাথা ঠান্ডা থাকছে কি না, তা বুঝতে দুর্দান্ত উপায় বার করেছেন। মাঠে নামার ঠিক আগের মুহূর্তে নিজের হার্টবিট মাপা! ‘‘নিজেকে শান্ত রাখতে চাই বলে এটা করি। যদি হার্ট খুব দ্রুত গতিতে চলে, মনে হয় নিজের সেরাটা দিতে পারব না। তাই হার্টবিট মেপে নামি। নিজের ইনিংস শুরু করি। বিভিন্ন জিনিস আবিষ্কার শুরু করি!’’
শুনলে ক্রিকেটকে, ক্রিকেটে এমন অকল্পনীয় ফর্ম ধরে রাখাকে অতীব সহজ মনে হয়! কিন্তু এর পিছনে যে কতটা পরিশ্রম আর কঠোর ফিটনেস শিডিউলে নিজেকে বেঁধে রাখতে হয়, বোঝা যায় না। যেমন গত শ্রীলঙ্কা সফরকে অভাবনীয় সাফল্যের একটা বড় কারণ ধরেন বিরাট। সেখানেই তিনি প্রথম ওয়েট-ট্রেনিং শুরু করেন।
‘‘গত বছর শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ওয়েট-ট্রেনিং শুরু করি। যা আমার পুরো শরীরটাকে পাল্টে দিয়েছে। এর পুরো কৃতিত্বই আমাদের ট্রেনারকে দেব,’’ বলে দিচ্ছেন কোহালি। খাওয়াদাওয়াতেও যিনি খুব সংযমী। বাটার চিকেন জাতীয় তেলমশলার খাবার ছোঁন না। এবং ফিটনেস-খাদ্যসংযমের এই মণিকাঞ্চন যোগে যে রূপান্তরের কোহালি আভিভূর্ত হয়েছেন, তাঁর বিস্তৃতি এতটাই যে সচিন তেন্ডুলকর নামক এক বিশাল বনস্পতিও আক্রান্ত হচ্ছেন। জল্পনা চলছে, কোহালি কি ছুঁয়ে ফেলছেন তাঁকে? দিয়ে যাচ্ছেন ছাপিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত?
‘‘এটা শুনলে খুব বিব্রত লাগে। এটায় তো ওঁর উপরই অবিচার হচ্ছে। সচিনের সঙ্গে কারও তুলনা চলে না। আপনারা এমন একজন ব্যাটসম্যানের কথা বলছেন যাঁর জাত, যাঁর ক্ষমতাই আলাদা,’’ বলে দিয়েছেন বিরাট। তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি নিজের ক্রিকেটকে উন্নত করার অনবরত চেষ্টা করে যাই। কিন্তু উনি যা যা করেছেন, তা করার জন্মগত অধিকার নিয়ে এসেছিলেন। আমি তো দু’বছর হল ভাল খেলছি। সচিন চব্বিশ বছর দেশের সেবা করে গিয়েছেন। আমাদের প্রজন্মের যে কোনও ব্যাটসম্যানের চেয়ে উনি সব সময় দু’টো লেভেল উপরে থাকবেন। আমিও ওঁকে দেখে অনুপ্রেরণা পাই। তবে এটাও ঠিক যে আমি নিজের মতো রাস্তা তৈরির চেষ্টা করি।’’
বিরাট-দর্শনে সচিন কোথায় আর তিনি কোথায়, সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু যেটা বোধগম্য হয় না, তা দিল্লি যুবকের ইন্টেন্সিটি লেভেল। পরপর বড় রান করার পরেও যা এক থেকে যায়। বিরাটের কাছে যার ব্যাখ্যা খুব সহজ। ‘‘আমি খেলাটাকে সম্মান করি। যে কোনও ম্যাচে নিজের একশো কুড়ি শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করি। এটা করতে পারার কারণ হয়তো আমার অতীতের ঝড়ঝাপটা। যা আমার মনে এখনও তাজা। আমি তাই কোনও কিছুকে সহজলভ্য ধরে নিই না। ভাবি না, এটা আমারই থাকবে সব সময়। আমি শুধু ক্রিকেট বুঝি। ক্রিকেট খেলা বুঝি।’’
এমন সোজাসাপ্টা জীবন দর্শন বলেই বোধহয় নিজেকে ক্রিকেটারের বাইরে ভাবতে পারেন। মেগাস্টার জেনেও মানুষ হিসেবে আরও উন্নত হওয়ার শপথ নিতে পারেন। অক্লেশে বলে দিতে পারেন, ‘‘আমি ক্রিকেটার হতে পারি। কিন্তু জীবনের অন্যান্য দিকগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই এক সাধক হিসেবে এই সংসারে থেকে যেতে।’’ 

No comments:

Post a Comment