সৌমিত্র কুমার রায়, ষষ্ঠী বিশ্বাস: জ্বালা জুড়নোর ম্যাচ। প্রমাণ করার ম্যাচ। বাগান কোচ সঞ্জয় সেনের রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখার ম্যাচ। শনিবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে আই লিগের শেষ ম্যাচ বেঙ্গালুরু যুদ্ধের চব্বিশ ঘণ্টা আগে চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউডকে রীতিমতো হুঙ্কার ছেড়ে রাখলেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ।
শুক্রবার সকালে নিজেদের মাঠে প্র্যাকটিসের পর সঞ্জয় সেন মন্তব্য করেন, ‘মোহনবাগান না বেঙ্গালুরু, কারা সেরা দল সেটা ওদের বুঝিয়ে দিতে চাই। আমরা আই লিগ চ্যাম্পিয়ন না হতে পারি, কিন্তু বেঙ্গালুরুকে হারানোর ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। প্রথম লেগে দু’গোলে জিতেছি ওদের মাঠে। ফুটবলটা মাঠে হয়। আমাদের সেটা প্রমাণ করতে হবে।’ শুক্র–সকালে বাগান তাঁবুতে সমর্থকদের ভিড় ছিল না। থাকলে নিশ্চয়ই সঞ্জয়ের এহেন হুঙ্কারের পর হাততালির ঝড় উঠত। কথাটা বলেই মোহন সারথি গটগট করে তঁাবু ছাড়লেন। শরীরী ভাষাই যেন বলে দিচ্ছিল ভেতরে ভেতরে ফুঁসছেন। বিকেলে শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য সঞ্জয়ের গলায় সেই ঝঁাঝ উধাও। তবে তিনি যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সেটা টের পাওয়া গেল। বলেন, ‘আমার লড়াইটা কোনও বিদেশি কোচের সঙ্গে নয়। মাঠে মোহনবাগান, বেঙ্গালুরু এফসি–র বিরুদ্ধে খেলবে। চেষ্টা করব অন্তত এই ম্যাচটা জিতে যেন আই লিগে রানার্স হতে পারি।’ পরক্ষনেই যোগ করেছেন, ‘আসলে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনার জন্যই আমরা এবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারলাম না। এটাও ঠিক সবসময় ভাল দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না।’
শুধু কি সেনাপতি, সবুজ–মেরুন সৈনিকরাও সুনীলদের বিরুদ্ধে নামার আগে তেতে রয়েছেন। আজকের ম্যাচ জিতলে লিগে রানার্স হওয়ার সুযোগ নর্ডিদের সামনে। তার থেকেও বড় কথা, এই ম্যাচ জিতে লিগ হারানোর ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে চাইছে বাগান–ব্রিগেড। গাড়িতে ওঠার আগে নর্ডি বলে গেলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে খুব সিরিয়াস। যতই লিগের শেষ ম্যাচ হোক। যে করেই হোক ম্যাচটা জিততে চাই।’ শনিবারের ম্যাচে দলের সেরা অস্ত্র নর্ডিকে পাওয়া যেমন সঞ্জয়কে স্বস্তি দিয়েছে, তেমনই অস্বস্তির কারণও আছে। চোট ও কার্ড সমস্যার জন্য পাওয়া যাবে না কিপার দেবজিৎ মজুমদার ও প্রণয় হালদারকে। সেইসঙ্গে আই লিগের শেষ চার ম্যাচে বাগান–রক্ষণের পারফরমেন্স চিন্তায় রেখেছে বাগান টিম ম্যানেজমেন্টকে। এ প্রসঙ্গে সঞ্জয় বলেন, ‘বিষয়টা মাথায় আছে। এই নিয়ে ডিফেন্ডারদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছি। সব ম্যাচ যে একই যাবে, তা নয়।’ বিপক্ষ দল গতি–নির্ভর ফুটবল খেলে। সেই গতির বিরুদ্ধে সেট–পিস থেকে গোল তুলে কাজ হাসিল করতে চাইছেন বাগান থিঙ্কট্যাঙ্ক। শুক্রবারের অনুশীলনে কর্নার, ফ্রিকিক অস্ত্রে শান দেওয়ার কাজটা সেরে রাখলেন কিংশুকদের হেডস্যর। মাঝমাঠে প্রণয়ের পরিবর্তে খেলবেন বিক্রমজিৎ, রক্ষণে ফিরছেন কিংশুক দেবনাথ। গোলে দেবজিতের বদলে অর্ণব। এ ছাড়া বাকি দল মোটামুটি অপরিবর্তিত। তবে এদিন শিলিগুড়িতে অনুশীলন করতে না পারার আক্ষেপও গোপন করেননি বাগান কোচ। বলেন, ‘অবশ্যই ম্যাচের আগে এখানে একবার প্র্যাকটিস করতে পারলে ভাল হত। যাই হোক যেটা হয়নি সেটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। যদি মাঠ নিয়ে কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে দু’দলকেই সেই সমস্যার মুখে পড়তে হবে।’
সুনীলদের টিমের দলগত ঐক্য নিয়ে সঞ্জয়ের গলায় প্রশংসার সুর। বললেন, ‘বেঙ্গালুরু ব্যক্তি–নির্ভর ফুটবল খেলে না। একটা দল হিসেবে খেলে। সব বিভাগেই ওরা সেরা। তা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না। সুনীলকে রিজার্ভ বেঞ্চে রেখেও ওরা অনেক ম্যাচ জিতেছে। সমর্থকরা কোনও আওয়াজ দেন না, সোনিকে না খেলালে সাংবাদিক, সদস্য–সমর্থকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না ওদের কোচকে।’
সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে, লিগ হাতছাড়া হওয়ার আপশোসের মধ্যেই চ্যাম্পিয়ন দলকে হারিয়ে রানার্স হওয়ার জেদ বেড়ে গেছে সবুজ–মেরুন ব্রিগেডের। সেইসঙ্গে ওয়েস্টউডের দলের বিরুদ্ধে বাগান কোচ হিসেবে সঞ্জয়ের ‘অপরাজেয়’ তকমা অক্ষুণ্ণ থাকে কি না, এখন সেটাই দেখার।
লিগ দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার পরই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন পড়শি ক্লাবের কোচ। তাহলে কি শনিবারও বিশ্বজিতের দেখানো রাস্তায় হাঁটবেন সঞ্জয়? মযদানে তো এমনই গুঞ্জন। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্নটা উঠতেই ঝঁাঝিয়ে উঠলেন বাগান কোচ। বলেন, ‘কিছু কিছু লোক এই গুঞ্জন করার জন্যই থাকেন। তঁাদের খেয়াল রাখা উচিত, আমি যে জায়গায় দলকে নিয়ে এসেছি, মোহনবাগান শেষ ১২ বছরে সেই জায়গায় ছিল না।’
No comments:
Post a Comment