অতীতের যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে দিয়ে এ বার ময়দানের সবচেয়ে দামি কোচ হতে চলেছেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান৷ লাল-হলুদের বিদেশি কোচ বছরে পাবেন ৭০ লক্ষ টাকা৷ ময়দানের ক্লাবে কোচিং করিয়ে যা কখনও পাননি কোচ৷
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে দু'বছরের চুক্তি হতে চলেছে মর্গ্যানের৷ ক্লাবের তরফে যে চুক্তিপত্র ধরানো হয়েছে, তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া উড়ে গিয়েছেন তিনি৷ খতিয়ে দেখে সই করে পাঠিয়ে দেবেন চুক্তি৷ আগের কোচ বিশ্বজিত্ ভট্টাচার্যের প্রায় তিন গুণের বেশি অর্থ পাচ্ছেন তিনি৷ বর্তমান মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেনের তুলনায় আরও বেশি৷
ইস্টবেঙ্গলে এত দুরবস্থার মধ্যে কেন মর্গ্যানের সঙ্গে এমন বিপুল টাকায় চুক্তি করতে হচ্ছে?
আইএসএল টিম কেরালা ব্লাস্টার্সের সহকারী কোচ হিসেবে মাসে সাত লক্ষ টাকা পেতেন মর্গ্যান৷ আই লিগ ও ফেডারেশন কাপের কয়েকটা ম্যাচে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ওই সাত লক্ষ টাকাই দেওয়া হয়েছে বিদেশি কোচকে৷ সেই হিসেব অনুযায়ী আগামী মরসুমের জন্য ৮৪ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন মর্গ্যান৷ কিন্ত্ত ফুটবল সচিবের সঙ্গে তিন দফার বৈঠকে ওই অর্থ নিয়ে দর কষাকষি হয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত সত্তর লক্ষ টাকার কাছাকাছি অঙ্কে ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করাতে রাজি হয়েছেন মর্গ্যান৷ বিমান টিকিট, ফ্ল্যাটের ভাড়া তো আলাদা থাকছেই৷
মজা হল, মর্গ্যান যখন রেকর্ড টাকায় ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নিচ্ছেন, তখন ময়দানে প্রশ্ন উঠছে, বিদেশি কোচেদের ক্ষেত্রেই কেন এত টাকা দেওয়া হয়? বাঙালি বা দেশি কোচ হলে কেন ক্লাবগুলো বেশি টাকা দেন না? মাস খানেক আগে পদত্যাগ করা বিশ্বজিত্ ভট্টাচার্যের সঙ্গে অনেক কমে চুক্তি হয়েছিল ক্লাবের৷ ২০ থেকে ২২ লক্ষের টাকা মতো৷ তাঁর আগে ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করানোর সময় আর্মান্দো কোলাসো পেতেন ৩৩ লাখের কিছু বেশি৷ মর্গ্যানের মাইনে ওঁদের তুলনায় অনেক বেশি৷
মর্গ্যানের আগে ময়দানের সবচেয়ে দামি কোচ ছিলেন করিম বেনশারিফা৷ মোহনবাগানে শেষ বার কোচিং করানোর সময় চল্লিশ লাখের উপর বছরে মাইনে ছিল তাঁর৷ সেই করিমকেও এ বার ছাপিয়ে গেলেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ৷ সত্তর লাখের সঙ্গে মর্গ্যান পাবেন থাকার ফ্ল্যাট ও গাড়ি৷
মোহনবাগানে কোচিং করানোর সময় সর্বোচ্চ ১৮ লক্ষ পেয়েছেন সুব্রত ভট্টাচার্য৷ দু'বার আই লিগ জয়ী কোচ গর্জে উঠলেন ইস্টবেঙ্গলের দামী কোচের কথা শুনে৷ সুব্রত বলে দেন, 'সাফল্যটা কী আছে মর্গ্যানের? তিন বছরে দুটো ফেড কাপ, ব্যাস!' একটু থেমে আবার জুড়লেন, 'দায়িত্ব নিয়ে কী করল এ বার? তিনটে ম্যাচ টানা হেরে গেল একই টিমের কাছে!'
সুব্রত দায়ী করছেন দুই প্রধানের কর্মকর্তাদের৷ 'একটা লোক ডেম্পোকে নামিয়ে দিয়েছে৷ আইএসএলে অবনমন থাকলে কেরালাও নেমে যেত৷ সেই লোকটাকেই জামাই আদরে নিয়ে এসেছে ইস্টবেঙ্গল৷ আমাদের কর্তাদের দূরদর্শিতার ভীষণ অভাব৷ না হলে এমন হয় নাকি?'
সুব্রতর মতো একই কথা বলছেন বিশ্বজিত্ ভট্টাচার্যও৷ কয়েক দিন আগেও যিনি লাল-হলুদের কোচ ছিলেন, সেই বিশ্বজিত্ প্রসঙ্গ উঠতেই বলে দিলেন, 'মর্গ্যানকে দোষ দিয়ে কী লাভ? এটা তো কর্তারা ঠিক করেন, কাকে কত দেওয়া হবে? সেটা যদি ইস্টবেঙ্গলের কর্তারা না বুঝতে পারেন, তা হলে পারফরম্যান্স যা হওয়ার তাই হবে৷'
No comments:
Post a Comment