Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Thursday, May 19, 2016

প্রফুল্ল, রিলায়েন্স এবং ইস্ট -মোহনের শেষ যাত্রা | রুপায়ণ ভট্টাচার্য - এই সময়


রাস্তার মোড়ে বিশাল বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ে যে মুখটাকে দিনের পর দিন দেখছি , হঠাত্‍‌ই তা মুছে অন্য ছবি লাগিয়ে দেওয়া দেখলে কী মনে হয় ?কারও মন অসম্ভব খারাপ হয়ে যায় ---এক আত্মীয় বিয়োগের যন্ত্রণার মতো৷ কারও মনে রেখাপাতই করে না ---এ আর এমন কী ? এটাই তো স্বাভাবিক !মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গলও যদি একদিন ফুটবল আকাশ থেকে উধাও হয়ে যায় , তা হলে প্রফুল্ল প্যাটেল -কুশল দাসদের দ্বিতীয় শ্রেণির প্রতিক্রিয়া হবে৷ এটাই তো স্বাভাবিক ! তুমি টিকে থাকতে পারলে না , এ দায় তোমার৷ কলকাতা থেকে ভারত কাঁপানো হিন্দুস্থান মোটর্স, ডানলপ , জেশপ , ক্যালকাটা কেমিক্যাল , সুলেখা , বেঙ্গল ল্যাম্প , বেঙ্গল ইমিউনিটির মতো সংস্থা যখন আড়ালে চলে যেতে পারে , তা হলে মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গল তো মুছতেই পারে৷

যাত্রাপালার বিবেক সেজে প্রফুল্ল-কুশল গাইতে পারেন , 'কালের নিয়ম ! বুঝলে হে , এ হল কালের নিয়ম !'দেশের অন্যতম ধনী সাংসদ , বিড়ি ব্যারন প্রফুল্ল প্যাটেলের সিজে টোবাকো ব্র্যান্ডের টার্ন ওভার ১০০০ কোটি টাকা৷ ৫০ হাজার লোক কাজ করেন সেখানে৷ দেখেশুনে মনে হচ্ছে , ভারতীয় ফুটবলটাকে তিনি দেখছেন বিড়ি বিক্রির দৃষ্টিভঙ্গিতে৷ এই যে ভারতীয় ফুটবল জুড়ে আইএসএলের প্রবল আলোর নীচে অন্ধকার , হাহাকারের স্ত্তপ , তার পিছনে একটাই কারণ৷ একনায়ক প্রফুল্ল বা তাঁর বেতনভূক সচিব কুশলের ফুটবল নিয়ে বিন্দুমাত্র আবেগ নেই৷ বছরের পর বছর নিজের পকেট থেকে টাকা বের করে যাঁরা ক্লাব চালিয়ে এসেছেন , তাঁদের যন্ত্রণা টের পান না এঁরা৷ এঁদের অবস্থা সেই বাবা -মার মতো৷ যিনি নিজের দুঃস্থ ছেলেগুলোকে হঠাত্ ত্যাজ্যপুত্র বানিয়ে বাড়ি থেকে বের করে বাইরে থেকে ধরে আনেন ঝকঝকে তকতকে কিছু তরুণকে৷ চল বাবা , তুই -ই আমাদের আসল ছেলে৷

আই লিগকে শেষ করার সভায় ছিলেন রিলায়েন্স স্পোর্টসের সিইও , আইপিএলের বিতর্কিত সুন্দর রামন৷ তিনি কী করে বুঝবেন ভারতীয় ফুটবলে মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গলের আভিজাত্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব? শুনলাম , আইএসএলের ধনী ক্লাবগুলোর হয়ে কথা বলার পর , কিছু সাংবাদিক তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করলে কার্যত রেরে করে ছুটে এসেছেন প্রফুল্ল৷ সুন্দরকে বাঁচাতে৷ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে , এ দেশের ফুটবল কী ভাবে ঢুকে গিয়েছে রিলায়েন্সের অতল গহ্বরে৷ আইএসএল যখন শুরু হল , মনে হয়েছিল , ডুবন্ত ভারতীয় ফুটবলে এটাই বুঝি শেষ লাইফজ্যাকেট৷ বাস্তবে প্রফুল্লবাবুরা এটাকে শিব গড়তে গিয়ে বাঁদর গড়ে ফেলেছেন৷

এবং এই বাঁদর বানাতে গিয়ে অতি দ্রুত তছনছ করে দিয়েছেন ভারতীয় ফুটবলের দীর্ঘদিনের সিস্টেম৷ মুছে দেওয়া হচ্ছে পুরোনো টুর্নামেন্ট , পুরোনো ক্লাব৷ সুব্রত ভট্টাচার্য, জেভিয়ার পায়াসদের মতো কিংবদন্তিদের কোচিং ডিগ্রির পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিচ্ছেন৷ এই কর্তারা তো জানেনই না , কে সুব্রত, কে পায়াস৷ সুব্রতদের পুরোনো ইতিহাস , কোচিং করার জন্য তীব্র আকুতি স্পর্শ করছে না৷ ওখানে সুন্দর রামন , এখানে স্কট ওডোনেল ---এআইএফএফে ছড়ি ঘোরানোর অনেক লোক৷ সুগ্রীব দোসর হয়ে রয়েছেন ভাইচুং ভুটিয়া৷ যিনি ক্ষমতাবানদের তালে তাল দিয়ে চলেন৷ প্রতিবাদে নেই৷ সারা ফুটবল মহলে আতঙ্কের হাওয়া , আর ভাইচুং সভায় গিয়ে আসল ব্যাপারে কথা না বলে অন্য প্রসঙ্গে বক্তৃতা দেন৷

যে দুটো ক্লাবে খেলে আপনি ভাইচুং , সেই দুটো ক্লাব দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাব হয়ে গেলে আপনার কিছু এসে যায় না৷ আপনি সত্যিই ধন্য৷ কুশল , সুন্দররা তো চাকরির জন্য ফুটবলে৷ গতকাল ক্রিকেটে ছিলেন৷ আগামি কাল থাকবেন না৷ অন্য কোনও খেলায় ফিরে যাবেন৷আপনি থাকবেন৷ ফুটবলটাই শেষ হয়ে গেলে কী করবেন ভাইচুংবাবু?কারা খেলছে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লিগে ? কারা টাকা ঢালছে ? অধিকাংশ টিমেই জড়িয়ে রয়েছে আম্বানি বা প্রফুল্ল প্যাটেলের আত্মীয়রা৷ ক্রিকেটে 'স্বার্থের সঙ্ঘাত ' নিয়ে এত হইচই হল ভারতে৷ ফুটবলে এ নিয়ে একটু খোঁড়াখুঁড়ি হলে কী যে হবে ! ঝাঁ চকচকে শো -র আড়ালে অনেকগুলো প্রশ্ন আড়ালে থেকে যাচ্ছে৷ আইপিএলে শাহরুখের কলকাতা নাইটরাইডার্স নয় বছর ধরে কলকাতায়৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাত ধরে যাবতীয় ক্ষীর খেয়ে গিয়ে কলকাতা ক্রিকেটের জন্য , কলকাতা শহরের জন্য কী করেছে শাহরুখের টিম ? কিচ্ছু না৷ কিস্যু না৷ কলকাতার ফুটবল টিম আতলেতিকো কলকাতাই বা কলকাতা ফুটবলের জন্য কী করেছে ? একটা সামাজিক কাজে , শহরের ফুটবলের উন্নয়ন , ভবিষ্যত্ পরিকাঠামো তৈরিতে কি দেখা গিয়েছে তাদের ? ও সব কইয়েন না কর্তা, ঘোড়াতেও হাসবে৷ ওখানে ফুটবল চালাচ্ছেন সিইএসসি কর্তারা৷ অতীতে মোহনবাগান , ইস্টবেঙ্গলকে এএফসি লাইসেন্সিং প্রথার কথা বলে নানা ধমক দিয়েছে প্রফুল্ল-কুশলের এআইএফএফ৷ ইউনাইটেড স্পোর্টসকে নামিয়ে দিয়েছে অবনমনে৷ আতলেতিকো কলকাতা ফুটবল কাঠামো গড়ার কী চেষ্টা করেছে প্যাটেলবাবু, দাশবাবু? আতলেতিকো অতি অপেশাদার রাস্তায় চলছে , দশ হাজার টাকার প্লেয়ারকে দশ লক্ষ দিচ্ছে , এখনই গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব কর্তাদের --- বুঝিয়ে দিচ্ছে , এটা মোহন -ইস্টেরই আর এক সংস্করণ৷

শুনলাম , মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গলে আইএসএলে খেলার রাস্তা জটিল বলে আতলেতিকো কর্তারা উল্লসিত৷ স্বাভাবিক৷ মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গল এদের প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে আতলেতিকো কিন্ত্ত মাঠে টালিগঞ্জ অগ্রগামী বা ইউনাইটেড স্পোর্টসের মতো মাছি তাড়াত৷ কারা দেখত এদের খেলা ? সেদিন আতলেতিকোর এক কর্তাকে অম্লান বদনে বলতে শুনলাম ,'আইএসএলে খেললে মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গলকে অন্য শহরে খেলতে হবে৷ আমরাই শুধু কলকাতায় খেলব৷' বুঝতে পারি , প্রফুল্ল কোম্পানি কাদের কথা শুনে মোহন -ইস্টকে অবজ্ঞা করার সাহস পান৷

একই রকম ভাবনা লিখতে লিখতে দুটো অন্যরকম প্রশ্ন তুলছি৷ 
১) প্রফুল্ল-কুশল না হয় ভারতীয় ফুটবলে দীর্ঘদিনের কাজ করা ক্লাব , টুর্নামেন্টগুলোকে তুড়ি মেরে মুছে দিচ্ছেন৷ ফেডারেশনের অন্য কর্তারা এর প্রতিবাদ করছেন না কেন ? কেন চুপ বিভিন্ন রাজ্য সংস্থার কর্তারা ? এতদিন কেন চুপ করেছিলেন বাংলার প্রতিনিধি সুব্রত দত্ত ? 
২) মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গল কর্তারাই বা এতদিন ধরে কেন বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারেননি ? কেন ক্লাবের পরিকাঠামো জীর্ণ এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত কিছু কর্তার হাতে ? কেন কিছু ফুটবলার বেতন পান না ? এতটুকু দ্বিধা না রেখে বলি , দুই প্রধানের এমন সীমাহীন দুর্দশা ডেকে এনেছেন বর্তমান কর্তারাই৷ মঙ্গলবার এত বড় সভা ,মোহনবাগান সেখানে বড় কর্তাই পাঠাতে পারেনি৷ক্ষমাহীন অপরাধ৷ 
আর দায়ী , ইউবি প্রধান বিজয় মালিয়া৷ কুড়ি বছর ধরে তিনি কোটি কোটি টাকা দিয়ে গিয়েছেন ক্লাবদুটোকে৷ এখনকার নব্য স্পনসরদের মতো সব ব্যাপারে মাথা ঘামাতে যাননি৷ মালিয়া এতদিন ধরে জবাবদিহি চাইলে ভারতীয় ফুটবলের একনায়ক মঙ্গলবার দুটো ক্লাবকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতে পারতেন না , 'ঐতিহ্য আর জনপ্রিয়তা কীসের ? এ সব থাকলে আর স্পনসর পায় না কেন ওরা ?'ময়দানে বিদ্রোহের হাওয়ায় ব্যতিক্রমী হয়ে সোমবার বড় ক্লাবের এক কর্তা ফুরফুরে গলায় বললেন , 'কী আর হবে ? শেষ পর্যন্ত আইএসএলে ১০ ক্লাবের বদলে ১১ টা ক্লাব নেবে৷ দেখে নেবেন , বেঙ্গালুরু এফসি আর ইস্টবেঙ্গল -মোহনবাগান খেলবেই৷ ' ভদ্রলোকের প্রবল বিশ্বাস , মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গলকে নিতেই হবে আইএসএলে৷ সমস্যা কিন্ত্ত সেখানেই শেষ হবে না৷ বরং শুরু হবে৷ চুনী গোস্বামী যে জন্য ফোনে সব শুনে একটা শব্দ উচ্চারণ করলেন৷ ভজকট৷ 'এ তো রীতিমতো ভজকট অবস্থা৷ ' সত্যিই ভজকট ---বিভ্রান্তির এক শেষ৷

রিলায়েন্সই হয়তো নয়া স্পনসর খুঁজে দিল কলকাতার দুটো বড় টিমকে৷ কিন্ত্ত তারপর ? নতুন স্পনসর ক্লাবে অনেক বেশি ক্ষমতা চাইবে৷ বর্তমান কর্তারা কি সেটা দেবেন ? ইউবিকেই বা তারা সরাবে কী করে ? কলকাতা থেকে তিনটি টিম খেললে আতলেতিকো কলকাতার কী ভবিষ্যত্ ? আইএসএলে অবনমন তুলে দিতে প্রফুল্ল প্যাটেলরা অস্ত্র করছেন আমেরিকা , অস্ট্রেলিয়ার লিগকে৷ সেখানে তো অবনমন না থাকা মেনে নিয়েছে ফিফা , ভারতের ক্ষেত্রে সেটা মানা হবে না কেন ? বিদেশি ফুটবলকে অস্ত্র বেছেই বলা যায় , কলকাতা থেকে তিনটি টিম খেলাটা খুব স্বাভাবিক৷ প্রশ্ন হল , অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়া আতলেতিকো কলকাতা তখন কী করবে ?সালগাওকর , ডেম্পোকে ফেলে শুধু মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গলকে সর্বোচ্চ লিগে নেওয়া কত যুক্তিযুক্ত?

গোয়ার দুই প্রধানও কিন্ত্ত পঞ্চান্ন -ষাট বছর ধরে ভারতীয় ফুটবলে স্রোত যুগিয়ে এসেছে৷ এখন বিদ্রোহের সময় সালগাওকর -ডেম্পোর সঙ্গে থেকে , পরে ডাক পেলে চলে যাওয়া কতটা ভদ্রতা হবে মোহন -ইস্টের ?এ সমস্ত উত্তরহীন 'ভজকট ' প্রশ্নের ফাঁকে বরং একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারত মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গল -সালগাওকর -ডেম্পো৷ বেশি টাকার দরকার নেই৷ আমরা অল্প টাকার টিম করে বেশি টাকার টিমগুলোর সঙ্গে লড়ব৷ বিশ্বের সব লিগেই তো এমন হয় ! রিয়াল -বার্সেলোনার সঙ্গে লড়ে যায় গ্রানাদা , লাস পালমাসের মতো ক্লাব৷ কখনও ম্যাঞ্চেস্টার সিটি -ইউনাইটেডকে ছাপিয়ে অতিমানবিক হয়ে ওঠে লেস্টার সিটি৷

প্রশ্ন করতে পারেন , গোয়া -বাংলার চারটে টিমকে আইএসএলকে নিলে যখন সমস্যা মিটে যায় , তা হচ্ছে না কেন ? আসলে সুন্দর রাজনদের আবার আইএসএলে বেশি ক্লাব বাড়াতে আপত্তি৷ তাঁদের কাছের ক্লাবগুলোর যে ফুটবলার পেতে সমস্যা হবে !সুন্দর৷ প্রফুল্ল৷ কুশল৷ প্রত্যেক শব্দেরই মানে অতি চমত্কার৷ শুধু এঁরা তিনে মিলে ভারতীয় ফুটবল আর মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গলের অন্তিম সংস্কার করতে চাইছেন দ্রুত৷ শেষ যাত্রার পথে খই আর খুচরো পয়সা
ছড়ানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন৷ বিপন্নতার দুই ক্লাব মোহনবাগান -ইস্টবেঙ্গল কর্তারা এখনও আশায় , বেঙ্গালুরু এফসির সঙ্গে তাদের আইএসএলে নেওয়া হবে৷

No comments:

Post a Comment