Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Thursday, May 19, 2016

কলকাতা ফুটবলের গর্ব ও ঐতিহ্যকে অস্তাচলে পাঠাতে চায় ফেডারেশন | রাতুল ঘোষ - বর্তমান


কলকাতার দুই বড় ক্লাবের কর্মকর্তারা দেওয়ালের লিখন সঠিকভাবে পড়তে পারেননি। ক্লাবের প্রশাসনিক ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখতে তাঁরা যে পরিমাণ উদ্যম দেখিয়েছেন, তার এক দশমাংশও চেষ্টা করেননি ক্লাবকে আর্থিকভাবে স্বয়ম্ভর করে গড়ে তোলার। অথচ মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গলের যে বিশাল ফ্যান বেস তা অনেক ইউরোপিয়ান ক্লাবেরও নেই। সেই সমর্থককূলকে দুই বড় ক্লাবের কর্তারা দীর্ঘদিন ধরে চূড়ান্ত অবজ্ঞা করে এসেছেন। 

ময়দানে নিজেদের ঘেরা মাঠে ফুটবল খেলার পাঠও তাঁরা সেই কবে তুলে দিয়েছেন। অথচ রাজ্য সরকার গত চার বছরে এই বড় ক্লাবগুলিকে কোটি কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। সরকারি অর্থে মোহন বাগান মাঠে ফ্লাড লাইট আবার জ্বলেছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী অতিথি দলের জন্য আলাদা ড্রেসিং রুম গড়ে তোলার দিকে যত্নবান হননি কর্তারা।
চূড়ান্ত দেনাগ্রস্ত বিজয় মালিয়ার আর্থিকভাবে ভরাডুবি হওয়ার পরেও মোহন বাগান কর্তারা একটা ভালো স্পনসর আনতে পারেননি। কারণ তাঁরা যাবতীয় ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখতে চান। নতুন স্পনসর যদি ক্লাবের ৫১ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করতে বলে সেই প্রস্তাবে কখনই সম্মতি দেবেন না দুই বড় ক্লাবের কর্তারা। কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন।’ কিন্তু এই ডায়লগ আর বেশিদিন চলবে না। দু’লাখ টাকার ফুটবলারকে অতীতে এঁরা তিনগুণ দামে কিনে বছরের পর বছর পুষে রাখতেন। এখন প্রতি মাসে ফুটবলারদের বেতন গুণতেই কালঘাম ছুটে যাচ্ছে কর্তাদের।
ফুটবল দুনিয়ার আধুনিকতার টাটকা, তাজা বাতাস এঁরা এতদিন কলকাতা ময়দানে প্রবেশ করতে দেননি। গত মঙ্গলবার দ্বারকায় ফুটবল হাউসে ফেডারেশনের এত গুরুত্বপূর্ণ সভায় কোনও শীর্ষস্থানীয় মোহন বাগান কর্তা কেন গেলেন না তা আমার কাছে অতিশয় দুর্বোধ্য।
এবার আসা যাক ফেডারেশন প্রসঙ্গে। স্পষ্টই বলা যাক, ফেডারেশন পুরোপুরি বিক্রি হয়ে গিয়েছে রিলায়েন্স স্পোর্টসের কাছে। আই এম জি আরের কাছ থেকে পাওয়া অর্থে এ আই এফ এফের বেতনভুক কর্মচারীদের মাইনে হয়। তাই সচিব কুশল দাস নতুন লিগের সংযুক্তিকরণের মিটিংয়ে মালিক রিয়ালেন্সের স্বার্থ যে দেখবেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগ বা আই এস এল মোট দশ বছর চলবেই। কারণ এ আই এফ এফ তেমনই চুক্তি করে রিলায়েন্সের কাছ থেকে ফি বছর কোটি কোটি টাকা নিয়ে চলেছে। তারা যে ভারতীয় ফুটবলের দুই মহীরুহ মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গলের স্বার্থ দেখবে না, সেটা কারও অজানা নয়। এখন কান্নাকাটি করে তেমন লাভ হবে না। কর্পোরেট হাউসগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা পাবে আই এস এল। মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গল পাবে না।
আই এস এল ‘ক্লোজড’ লিগ। কোনও অবনমন থাকবে না এই আই এস এলে। ফিফা এমন ‘ক্লোজড’ লিগকে অনুমোদন দেবে বলে মনে হয় না। কলকাতার দুই বড় ক্লাবের কর্তাদের আগে এ ব্যাপারে ফিফা’র কাছে গাইড লাইন চাওয়া উচিত। তার বদলে তাঁদের কেউ কেউ আদালতে মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন। আদালতে যাওয়ার ব্যাপারটি ফিফা কখনই অনুমোদন করে না। এটা সর্বাগ্রে মাথায় রাখা দরকার। আই পি এল যেমন আই সি সি অনুমোদিত ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়, তেমনই আই এস এল’ও ফিফা বা এ এফ সি’র অনুমোদন পায়নি। তাই প্রচুর সন্দেহজনক ম্যাচ হয়ে থাকে এই দুই বিতর্কিত টুর্নামেন্টে। আই পি এল সিক্সে ম্যাচ গড়াপেটা ও স্পট ফিক্সিংয়ের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট দু’টি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলকে দু’বছরের জন্য সাসপেন্ড করতে বাধ্য করেছিল বি সি সি আই’কে। গত ২০ ডিসেম্বর আই এস এল ফাইনালে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে হারার পর এফ সি গোয়ার অন্যতম দল মালিক দত্তরাজ সালগাওকর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বয়কট করে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘পুরো আই এস এল ফাইনাল ফিক্সড, গট আপ। আমাদের জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ এই মন্তব্যের জন্য এফ সি গোয়ার দল মালিকদের ১১ কোটি টাকা করে জরিমানা ধার্য সহ তিন বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। অথচ এফ সি গোয়া ক্লাবটি চালান সালগাওকরের মালিক দত্তরাজ সালগাওকর এবং ডেম্পোর মালিক শ্রীনিবাস ডেম্পো। ভারতীয় ফুটবলে সালগাওকর ও ডেম্পোর অবদান কারও অজানা নয়। ডেম্পো পাঁচবারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন। দত্তরাজ সালগাওকর রিলায়েন্সের কর্ণধার ধীরুভাই আম্বানির বাড়ির মেয়েকে বিবাহ করেিছলেন। তাঁর বাড়ির একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে কিছুদিন আগে আম্বানিরা যাননি।
বর্তমান ফেডারেশন কর্তাদের কাছে মেইন স্ট্রিম ভারতীয় ক্লাবগুলির ঐতিহ্য ও অবদানের কোনও মূল্য নেই। তাঁদের বক্তব্য, ‘ফেল কড়ি, মাখো তেল’। ১৫ কোটি টাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিলে তবেই নতুন ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলতে পারবে। পরবর্তী দু’টি ডিভিশন লিগ ওয়ান এবং লিগ টু-তে বাকি সব নামী ভারতীয় ক্লাব খেলতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারতীয় ফুটবলের উপরের স্তর থেকে পরিকল্পিতভাবে মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গলকে সরিয়ে দেওয়ার এক দীর্ঘ মেয়াদী চক্রান্তের শরিক হয়েছিলেন বর্তমান ফেডারেশন কর্তারা। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এঁরা অবশ্যই আঁস্তাকুড়েও স্থান পাবেন না।

No comments:

Post a Comment