হাতের কাছেও এসে স্পর্শ করা হল না আই লিগ। স্বভাবতই আপশোস রয়েছে মোহন
বাগান শিবিরে। সোমবার সকালে শতাব্দীপ্রাচীন তাঁবুতে উপস্থিত হাতে গোনা
কয়েকজন সমর্থককেও বলতে শোনা গেল, ‘বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে সালগাওকর ড্র করতে
পারলে আমাদের শেষ সুযোগ থাকত। কিন্তু সেটাও হল না। ঠিক আছে, পরের বছর
আবার হবে।’
মোহন অনুরাগীদের মতো অতীত আঁকড়ে পড়ে থাকতে চান না কোচ সঞ্জয় সেনও। বরং
এই জায়গা থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে চান। তাঁর বক্তব্য, ‘এখন আমাদের সামনে
ফেডারেশন কাপ এবং এএফসি কাপ রয়েছে। ২৩ এপ্রিল বেঙ্গালুরু এফসি’কে হারিয়ে আই
লিগে রানার্স হওয়াই লক্ষ্য। এছাড়া এএফসি কাপে মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড
রিক্রিয়েশনের সঙ্গে খেলা ২৭ এপ্রিল। নক-আউট পর্বে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। তবে
ওই ম্যাচ জিতেই পরবর্তী রাউন্ডে উন্নীত হতে চাই।’ সঞ্জয়ের কথাবার্তায়
বোঝা গেল, আই লিগে রানার্স হয়ে ফেডারেশন কাপে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী
প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হওয়াই তাঁর টার্গেট। গত তিন বছরে দু’বার আই লিগ
জিতল বেঙ্গালুরু এফসি। এই প্রসঙ্গে সবুজ-মেরুন সারথির বিশ্লেষণ, ‘ওরা
নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী এগয়। টিমগেমে বিশ্বাস করে। আমাদের মতো
সনি-সনি করে লাফায় না। এই তো আপনারাই (সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে) সনির
অনুপস্থিতি নিয়ে গত দু’সপ্তাহে অসংখ্যবার প্রশ্ন করেছেন। ম্যারাথন লিগে শেষ
পর্যন্ত ধারাবাহিক ফুটবল খেলতে হয়। এই তো বার্সেলোনার কথাই ধরুন। কত
পয়েন্টে এগিয়ে ছিল। আর এখন কী অবস্থা। আতলেতিকো মাদ্রিদের সঙ্গে মেসিদের
পয়েন্ট সমান।’ উল্লেখ্য, আইজল এফসি, ইস্ট বেঙ্গল ও লাজং এফসি’র বিরুদ্ধে
খেলেননি সনি। ওই তিনটি ম্যাচ থেকে মাত্র এক পয়েন্ট সংগ্রহ করে মোহন বাগান।
ডিএসকে শিবাজিয়ান্স ম্যাচে সনি উঠে যাওয়ার পরেই তৃতীয় গোল হজম করে ড্রয়ের
মুখ দেখে সঞ্জয় সেন-ব্রিগেড। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, এই মোহন বাগান দলে
সনি নর্ডির উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোচ এখনও পর্যন্ত তা
স্বীকার করতে রাজি নন। সম্ভবত টিম স্পিরিট ধরে রাখার জন্যই সঞ্জয় ব্যক্তিগত
কোনও ফুটবলারকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চান না। সঞ্জয়কে প্রশ্ন করা হয়,
বেঙ্গালুরু এফসি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আপনি কি ওয়েস্টউডকে শুভেচ্ছা
জানিয়েছেন? ঠোঁটকাটা মোহন কোচের চটজলদি উত্তর, ‘না ভাই, অত সৌজন্য আমার
নেই। গতবার আমরা যখন আই লিগ জিতেছিলাম তখন কে কে আমায় শুভেচ্ছা বার্তা
পাঠিয়েছিল তা মনে আছে।’
চেতলার বাসিন্দা সঞ্জয় সেনের হাত ধরেই গতবার আই লিগে ১৩ বছরের খরা কেটেছিল
মোহন বাগানের। এবার কি ফেডারেশন কাপে ছয় মরশুমের ব্যর্থতা ঘুচিয়ে সাফল্যের
আলো এনে দিতে পারবেন বাঙালি কোচ? সঞ্জয় আশাবাদী। বললেন, ‘গোয়া ফেডারেশন
কাপে প্রাথমিক পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল দল। তাই তার দায় তো আমি এড়িয়ে
যেতে পারি না। এবার চেষ্টা করব মোহন বাগানকে চ্যাম্পিয়ন করার।’ বারপুজোর
দিন ক্লাব সভাপতি এবং সচিব ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আগামী মরশুমে সঞ্জয় সেনই
মোহন বাগানের কোচের পদে থাকছেন। সোমবার এই প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলে তিনি
বলেন, ‘কর্তারা আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন শুনে ভালো লাগল। তবে
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সাফল্য এনে দিতে না পারলে কোচের সরে যাওয়া উচিত।’
আই লিগে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন ইস্ট বেঙ্গলের কোচ বিশ্বজিৎ
ভট্টাচার্য। প্রিয় বিশুদা’র সরে দাঁড়ানো নিয়ে সঞ্জয়ের বক্তব্য, ‘ওঁর জন্য
খারাপ লাগছে। এর বেশি কিছু আমি বলব না।’ ক্লাবতাঁবু থেকে বেরনোর সময় সনি
নর্ডিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার না কোচের, কার অনুপস্থিতি দলের
পারফরম্যান্সে বেশি প্রভাব ফেলেছে? হাইতিয়ান তারকাটির বিশ্লেষণ, ‘মনে হয়
দুটোই। তবে আমার অভাব ঢাকার জন্য জেজে, কর্নেল গ্লেনরা ছিল। কিন্তু কোচের
অভাব পূরণ করার লোক ছিল না। আইজল এফসি ম্যাচ হেরেই আমরা বিপদে পড়ি। আর
ডার্বিতে হেরে চ্যাম্পিয়নশিপ দৌড় থেকে ছিটকে যাই। এখন ফেডারেশন কাপ এবং
এএফসি কাপে ভালো খেলাই মোহন বাগানের প্রত্যেক ফুটবলারের কাছে চ্যালেঞ্জ।’
এদিনের অনুশীলনে অনুপস্থিত ছিলেন বলবন্ত সিং। তিনি ভারতীয় দলের
ফিজিওথেরাপিস্ট জিজি জর্জের কাছে চিকিৎসা করাতে গিয়েছেন। সঞ্জয়ের আশা,
ফেডারেশন কাপে বলবন্তের সার্ভিস পাওয়া যাবে।
সোর্স ঃ বর্তমান
No comments:
Post a Comment