মোহনবাগান ১ (জেজে) মেজিয়া ১ (আসাদুল্লা)
মোহনবাগানের উদ্দেশ্য সফল। কোচ সঞ্জয় সেন ও তাঁর ফুটবলারদের লক্ষ্য ছিল, জিততে না পারলেও মালদ্বীপের মাঠে মেজিয়ার বিরুদ্ধে যেন একটা পয়েন্ট অন্তত পাওয়া যায়। সেটাই হল। আসাদুল্লার গোলে পিছিয়ে পড়েও একবারে ম্যাচের অন্তিম লগ্লে সংযুক্তি সময়ে জেজের গোলে ১–১ করে মোহনবাগান এ এফ সি কাপের ম্যাচে মূল্যবান একটা পয়েন্ট তুলে নিয়ে গ্রুপ শীর্ষে থাকা নিশ্চিত করল।
৫ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১১। বাগানের শেষ ম্যাচের ফল যা–ই হোক, তাতে অন্য কোনও দলের পক্ষে তাদের আর ছোঁয়া সম্ভব নয়। এদিনের ফলে মোহনবাগান ঘরের মাঠে এক ম্যাচের প্রি–কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে ২৪ মে। সম্ভবত প্রতিপক্ষ হতে চলেছে সেই ট্যাম্পাইন রোভার্স। যাদের যুবভারতীতে নর্ডি, গ্লেন, কাৎসুমিরা হারিয়েছিলেন। গুয়াহাটির মাঠে প্রথম দফার ম্যাচে মেজিয়াকে ৫–২ গোলে হারাতে বেগ পেতে হয়নি সবুজ–মেরুন ব্রিগেডকে। কিন্তু এদিন মালের মাঠে মেজিয়ার কাছে হার বাঁচাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হল জেজে, গ্লেন, কাৎসুমিদের। অদ্ভুত ব্যাপার হল মোহনবাগানের টিম লিস্টে সনি নর্ডির নাম শুরুতে থাকলেও, একেবারে শেষ মুহূর্তে নর্ডির নাম কেটে সুভাষের নাম ঢোকানো হয়। গা ঘামানোর সময় তিনি সঞ্জয়কে বলেন, ‘লাগছে’। এরপর কোচ আর ঝুঁকি নেননি। এতে বাগানের ফুটবলারদের তাল কেটে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইতিমধ্যেই এটা প্রমাণিত নর্ডিবিহীন মোহনবাগান হাল ভাঙা পালতোলা নৌকার মতোই বেসামাল। সেটা এদিন আবার বোঝা গেল নর্ডি না খেলতেই। আই লিগের শেষ ম্যাচে যে মোহনবাগান আক্রমণে সুনামির ঝড় তুলে বেঙ্গালুরু এফ সি–কে হারিয়েছিল, সেই বাগানের খেলায় এদিন বেশ ছন্নছাড়া ভাব। সুভাষ তো আর নর্ডির বিকল্প হতে পারেন না। তাছাড়া এদিন মালের আবহাওয়া ছিল প্রচণ্ড গরম। রেফারিকে বিরতি ছাড়াও দুবার জলপানের বিরতি নিতে হয়। প্রথম ৩০ মিনিট তো মেজিয়ার আক্রমণের মুখে বাগান ডিফেন্স চাপে কুঁকড়ে গিয়েছিল। এদিন কার্ড সসম্যায় দলে ছিলেন না স্টপার লুসিয়ানো। কোচ সঞ্জয় তাঁর জায়গায় কিংশুকের পাশে খেলান সঞ্জয় বালমুচুকে। বলতে গেলে তিনি উতরে দেওয়ার মতো খেলেছেন। গোল হজমের ক্ষেত্রে তাঁর ও গোলকিপার অর্ণবের আংশিক ত্রুটি ধরা পড়েছে। চোট সারানোর পর অল্প সময়ের জন্য পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামলেও এদিন শুরু থেকে শেষপর্যন্ত খেললেন শৌভিক ঘোষ। তা–ও ১৪ মিনিটে গোল করার মতো জায়গায় পৌছে গিয়েছিল মেজিয়া। ইমাজ আমেদের শট পোস্টে লাগলে বাগান তখনকার মতো বেঁচে যায়। আধঘণ্টা পেরোতে বাগান খেলা ধরা শুরু করে ধীরে ধীরে। ৩৪ মিনিটে রাজু গায়কোয়াড়ের ক্রশে গ্লেনের হেড পোস্টে না লাগলে বাগানও তখন এগিয়ে যেতে পারত। তবে ৬৫ মিনিটে গোল খাওয়া এড়াতে পারেনি বাগান। বালমুচু ও গোলকিপার অর্ণবের ভুলে গোল করেন আসাদুল্লা। গোল খেয়ে সম্বিত ফেরে মোহনবাগান ফুটবলারদের। কোচ সঞ্জয়ও আক্রমণে অন্য মাত্রা আনতে বিক্রমজিতের জায়গায় আনেন লেনিকে। তাতে ফল মেলে। চোট পেয়ে গ্লেন বসে গেলেও গোল শোধের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালায় বাগান। ৯৩ মিনিটে সমতা ফেরানোর গোল পেয়েও যায়। সুভাষের পরিবর্তে মাঠে আসা প্রবীর মাপা সেন্টার করলে জেজে হেডে ১–১ করে দলের মান বাঁচান। একইসঙ্গে গ্রুপ শীর্ষে শেষ করার লক্ষ্য পূরণ। এত খুশি সঞ্জয় সেন। ফোনে যোগযোগ করা হলে বলেন, ‘আমাদের ভাবনাই ছিল ম্যাচটা থেকে এক পয়েন্ট পাওয়া। আমরা সেই জন্য অঙ্ক কষে খেলতে নেমেছিলাম। এক গোলে পিছিয়ে পড়েও শেষ মুহূর্তের গোলে সমতা ফেরানো ফুটবলারদের লড়াকু চরিত্রের প্রমাণ। এই লড়াইটাই আমি সবসময় ফুটবলারদের মধ্যে দেখতে চাই। গ্রুপ শীর্ষে যাওয়া আমরা শেষ ম্যাচটা খোলা মেজাজে খেলতে পারব। সামনে ফেডারেশন কাপ। সেখানে পুরো ফোকাসটা দেওয়া যাবে।’ প্রশ্ন ছিল, সনি নর্ডির চোট কতটা গুরুতর? গ্লেনেরই বা কী সমস্যা যে তঁাকে তুলে নিতে হল? বাগান কোচ বলেন, ‘খেলতে নামার আগে নর্ডি জানায় ওর পায়ে লাগছে। যেহেতু সামনেই ২ তারিখে সালগঁাওকারের সঙ্গে ফেডারেশন কাপের সঙ্গে অ্যাওয়ে ম্যাচ রয়েছে গোয়ার মাঠে, তাই নর্ডিকে খেলানোর ঝুঁকি নিইনি। কারণ ও আমার দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। আর গ্লেনের কাফ মাসলে লেগেছে। তবে এমন কিছু গুরুতর নয়। আশা করছি সালগঁাওকার ম্যাচ খেলতে অসুবিধে হবে না।’ সঞ্জয় জানান, আই লিগটা হাতছাড়া হয়েছে ভাল খেলেও, কিন্তু ফেড কাপটা জেতার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবেন ফুটবলররা। এর জন্যে প্রত্যেকেই মানসিকভাবে তৈরি।
মোহনবাগান: অর্ণব, রাজু, কিংশুক, সঞ্জয়, শৌভিক ঘোষ, কাৎসুমি, বিক্রমজিৎ (লেনি), প্রণয়, সুভাষ (প্রবীর), জেজে, গ্লেন (শৌভিক চক্রবর্তী)।
No comments:
Post a Comment