গুয়াহাটি থেকে জয় চৌধুরি, ২০ মে: ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক মানের হলেও প্রস্থে সল্টলেক স্টেডিয়ামের মতো নয়। অনেকটা কাঞ্চনজংঘা স্টেডিয়ামের মতো। পেনাল্টি বক্স আর কর্নার ফ্ল্যাগের মধ্যে ব্যাবধান কম। মাঠটি প্রস্থে কম হওয়ায় ফেড কাপ ফাইনালে সনি-কাটসুমির ঝড় রুখে দেওয়ার জন্য বাড়তি সুবিধা পাবে আইজল এফ সি।
এমনিতে রাইট ব্যাক চুলোভা কিংবা লেফট ব্যাক রিকির স্বাস্থ্য খুব ভালো নয়। দুরন্ত গতিতে আক্রমণে উঠে দুই প্রান্তিক হাফ এমকে ও অ্যালবার্টকে বল সরবরাহ করেন। আই লিগের প্রথম ম্যাচে চিলোভা কিন্তু কাটসুমিকে আটকাতে পারেননি। আর আইজল এফ সি’র সৌভাগ্য যে মরশুম শেষ হয়ে গেলেও এই মুহূর্তে ভারতে খেলা সেরা বিদেশি সনি নর্ডির মুখে পড়তে হয়নি। কারণ বারাসাতে হোম ম্যাচের সময়ে সনি মোহন বাগানের নথিভুক্ত খেলোয়াড় ছিলেন না। আর ২৬ মার্চ ফিরতি ম্যাচের সময়ে তিনি ছিলেন আহত। ফিরতি পর্বের ম্যাচে সনির মতোই ছিলেন না প্রীতম কোটাল, জেজে আর প্রণয় হালদার। তারা তখন জাতীয় শিবিরে। সেই ম্যাচে আইজল এফ সি’র কাছে হেরে আই লিগে মোহন বাগানের পদস্খলন হয়। এবার পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে নামছে মোহন বাগান। তাই জহর দাস শনিবার ৪-১-৪-১ পদ্ধতিতে দল সাজাচ্ছেন। আপফ্রন্টে খেলবেন কালীঘাট এম এসে খেলা গতিময় স্ট্রাইকার জোয়েল সানডে। সঞ্জয় সেনের আমলে ২০১২-১৩ মরশুমে মহমেডানের হয়ে খেলে আলফ্রেড কালো সাদা ব্রিগেডকে আই লিগে তুলতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। আলফ্রেডকে উইথড্রল হিসাবে খেলিয়ে প্রতি আক্রমণে মোহন বাগানকে বেকায়দায় ফেলতে চান জহর। দলের অধিনায়ক তথা সেরা খেলোয়াড় ডেভিড এই ম্যাচে সাসপেন্ড। তাঁর জায়গায় আনকোরা লোথারকে নামাচ্ছেন জহর। তাঁকে সাহায্য করার জন্যই আলফ্রেড খেলবেন নীচে। একটু ছোট মাঠে গোল মুখ জ্যাম করে ম্যাচটি টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়াই আইজলের লক্ষ্য। তাই জাপানি ইউটার মতো আক্রমণাত্মক হাফকে না খেলিয়ে পরে নামাচ্ছেন জহর। ২০০৯ সালে গুয়াহাটির নেহরু স্টেডিয়ামে ফেড কাপ ফাইনালে আরেক পাহাড়ি দল লাজং এফ সি যে ভাবে প্রতি আক্রমণমূলক ফুটবল খেলে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে গিয়েছিল আইজলও তা করতে চলেছে। আর এটা সঞ্জয় সেন ভালোই বুঝতে পারছেন। গোলের মুখে ওপেন স্পেস যে স্ট্রাইকাররা পাবেন না তা মোহন কোচও বুঝতে পারছেন। তাই প্রতিপক্ষকে একটু মেপে নিয়ে প্রথমার্ধের মাঝামাঝি থেকে প্রেসিং ফুটবল খেলে জয়ের কড়ি যোগাড় করতে চাইছেন সঞ্জয়। হংকংয়ে সাউথ চায়না, ফেড কাপ সেমি ফাইনালে লাজং আর বারাসতে শিবাজিয়ান্সের বিরুদ্ধে এমন ফুটবলই খেলেছিল মোহন বাগান। এই সব দলের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে লিড নিতে না পারলে দ্বিতীয়ার্ধে যে চাপ বাড়বে তা অস্বীকার করছেন না সঞ্জয়। তাই তো এদিন অনুশীলনে সনি- কাটসুমির ফ্রি-কিক মারার উপর জোর দেওয়া হল। বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে করানো হল কর্নারের ফলো আপ মুভমেন্ট। আইজলের চার ডিফেন্ডারের গড় উচ্চতা ভালো নয়। তাই গোল মুখে গ্লেন কিংবা জেজের হেড ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। আইজলের স্টপার মহমেডানে খেলে যাওয়া ইমানুয়েলের চেহরা শক্তপোক্ত নয়। গ্লেনদের অ্যাডভানটেজ পাওয়ার কথা। শেষ দিকে গ্লেন কিন্তু গোলের চেয়ে অ্যাসিস্ট করেছেন বেশি। প্রতি আক্রমণের সময়ে সনি বা কাটসুমির সঙ্গে ওয়াল খেলে জেজে দিচ্ছেন দুরন্ত থ্রু। মাঠ ও মাঠের বাইরে দুরন্ত টিম স্পিরিটই ফেড কাপ ফাইনালে মোহন বাগানের টি আর পি। কোচ আর শীর্ষ কর্তারা দলটিকে শেষ পর্বে একসূত্রে গেঁথেছেন। তাই তো সনির রুম পার্টনার হন আজহার। লুসিয়ানো কোনও বিদেশির সঙ্গে না থেকে আবার বেছে নেন প্রীতম কোটালকে। দুরন্ত স্পিরিটের উদাহরণ হল মোহন বাগানের হয়ে শেষ প্র্যাকটিস করে সহ খেলোয়াড়দের ডেকে নিয়ে সনি যখন বলেন, ‘এ এফ সি কাপের ম্যাচে তো থাকতে পারব না। শনিবারই তোমাদের এই সনির এই মরশুমে শেষ ম্যাচ। চলো আমরা ট্রফিটি জিতি।’ সঞ্জয়ও ছেলেদের মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘চারদিকে ভালো খেলার প্রশংসা হচ্ছে।এর কোনও মূল্যই থাকবে না চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে।’ বকেয়া পেমেন্ট মোহন বাগানে বড় সমস্যা। সভাপতি গত ১৯ মাসে ন’বার পেমেন্টের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন হলে মোহন বাগান পাবে ২০ লাখ টাকা। আই লিগে রানার্স হয়ে পেয়েছে ৬০ লাখ। এ এফ সি কাপের চারটি ম্যাচ গুয়াহাটিতে খেলতে গিয়ে ১৫-১৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তবুও পারফর্ম করতে পারলে কারও পেমেন্ট যে বাকি থাকবে না তা সাত সকালে শহরে এসে ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে ছেলেদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনুপ্রাণিত করে গেলেন সহ সচিব।টাই ব্রেকার অনুশীলনে এদিন মনেযোগী ছিলেন সঞ্জয় সেন। তবে তাঁকে এই ব্যাপারে টেক্কা দিয়ে গিয়েছেন জহর দাস। বৃহস্পতিবার সকালে মোহন বাগান নিজেদের মাঠে আধ ঘণ্টা টাইব্রেকার অনুশীলন করে। জহর মাঠে পাঠিয়েছিলেন তাঁর এক চরকে। কে কোন দিকে বল রেখেছে তা ই-মেলে আইজল কোচকে জানিয়েছেন সেই গুপ্তচর। নিজের হোটেলে বসে জহর বলছিলেন, ‘আই লিগে ফিরতি পর্বে আমাদের পাত্তা দেয়নি ওরা। সনি-জেজেকে ছাড়াই খেলতে রাজি হল। ম্যাচ পিছিয়ে দিল। এবারও আমাদের ভয় পাচ্ছে। আমরা লড়ব।’ আর সেই লড়াই যাতে ৯০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয় সেই জন্য সক্রিয় মোহন বাগানের তিন ‘এস’ কোচ, ফুটবল সচিব আর সহ সচিব। এদিন বিকেলেও বৃষ্টি হল এখানে। স্টেডিয়ামের মাঠ আরও নরম। বারাসতে ফিল্ড টার্ফে খেললেও নিজেদের ঘাসের মাঠে অনুশীলন করার অ্যাডভানটেজ পাবে সনিরা। ঘাসের মাঠে অনুশীলনই করেনি আইজল।
No comments:
Post a Comment