জয় চৌধুরি, গুয়াহাটি, ২০ মে: চলতি মরশুমে মোহন বাগান ভারতের প্রায় সব দলকেই হারিয়েছে। ব্যতিক্রম ইস্ট বেঙ্গল। ফেড কাপ জিতলে ৫১ সপ্তাহ পর মোহন বাগান আবার ট্রফি পাবে। মরশুমে ট্রফিহীন থাকতে হবে না। কিন্তু সব দলকে হারালেও মোহন বাগান শেষ হতে চলা বর্তমান মরশুমে একবারও ইস্ট বেঙ্গলকে হারাতে পারল না কেন?
প্রেস কনফারেন্স শেষ করে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার সময়ে এই প্রশ্নটি লুফে নিয়ে ছক্কা হাঁকানোর ভঙ্গিতে সঞ্জয় সেন বললেন, ‘ছেলেদের বলেছি, ফেড কাপ পেলে ডার্বির ব্যর্থতা কেউ মনে রাখবে না। মোহন বাগান গত ১৩ বছর আই লিগ পায়নি। ২০০৯-১০ মরশুমে টানা ১০টি ম্যাচ জিতে আই লিগে রেকর্ড করেও ট্রফি পায়নি। তাই সেই টানা ১০টি জয়ের রেকর্ড সমর্থকরা মনে রাখেনি। তাই ফেড কাপ না পেলে আমাদের এই দুরন্ত পারফরম্যান্সের কোনও মূল্য নেই। আমি ফুটবলারদের স্বাধীনতা দিয়েছি। দলের স্পিরিট দারুণ। মনে হয় আমরা টার্গেটে পৌঁছাতে পারব।’এটি মূলত অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়াম। ডিসকাস আর শট পাট প্র্যাকটিস হয়। বর্ষা প্রায় এসে যাওয়ায় রোজই বৃষ্টি হচ্ছে। ডিসকাস আর শট পাট অনুশীলনের জন্য মাঠের মধ্যে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে বলে জহর দাস অভিযোগ করেন। শটপাট আর ডিসকাস থ্রোর মার্কিংয়ের জন্য ব্যবহৃত পেরেক খুঁজে পান আইজল কোচ। বৃষ্টির পর মাঠের অবস্থা বদলে গিয়েছে তা মানছেন সঞ্জয় সেনও। কিন্তু ২৪ মে তাদের এ এফ সি কাপ খেলতে হবে এই মাঠেই। তাই মুখ খুলছেন না। শুধু মাঠ নিয়েই সমস্যা নয়, দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের ফাইনালের আগে চার দিকে ডামাডোল। গত দুইদিন গুয়াহাটি- দিসপুর ঘুরে কোথাও ফেড কাপের প্রচার গাড়ি চোখে পড়েনি। শেষ পর্যন্ত দুপুরে দুটি ট্যাবলো বের হয়। স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টারে মাছি তাড়াচ্ছে। সাকুল্যে ৫০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে। এখানে থাকা মিজো আর মণিপুরী ছাত্ররা টিকিট কিনেছে। স্টেডিয়াম গুয়াহাটি শহর থেকে প্রায় আট কিমি দূর। তাই পল্টনবাজার-পানবাজারেব বাঙালিদের উৎসাহ নেই। রাত সাড়ে ন’টায় বাইপাস সন্নিহিত এলাকা থেকে গুয়াহাটির প্রাণকেন্দ্রে যাতায়াত করাও কঠিন। ফেডারেশনের কোনও শীর্ষ কর্তাকে এখনও দেখা যায়নি। টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর অনিল কামাথেরও দেখা নেই। সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্তও আসছেন না। তবে জাতীয় ক্যাম্প চলছে বলে আসতে পারেন ফেডারেশন সচিব কুশল দাস। অক্রুর দত্ত জানান, নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়ির জন্য সেই ভাবে প্রচার করা যায়নি। ম্যাচ কমিশনার ও ম্যাচ রেফারিরা এদিন রাত আটটা পর্যন্ত শহরে এসে পৌঁছাননি। তাঁদের বেশি রাতে আসার কথা। শনিবার সকাল দশটায় স্টেডিয়ামে ম্যানেজার্স মিটিং ডাকা হয়েছে। ফেড কাপ ফাইনালে এমন শৈথিল্য অতীতে দেখা যায়নি। সন্ধ্যা সাতটায় ম্যাচ। আর ম্যানেজার্স মিটিং সেদিন সকালে, বিশ্বের কোথাও এই রকম হয়নি।
তবে এর মধ্যেই সুখবর যে ফেড কাপ গুয়াহাটিতে পৌঁছেছে। অসম ফুটবল সংস্থাটি সেটিকে যত্ন নিয়ে পালিশও করেছে। সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রফিটিকে নিয়েও আসা হয়। আর ওই কাপটি দেখিয়ে জহর দাস বলেন আই লিগের চ্যাম্পিয়ন দলকে যখন আমরা দুই বার হারিয়েছি, তখন মোহন বাগানকেও হারাতে পারি। বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে আমরা রক্তের স্বাদ পেয়েছি। ফাইনালেও সেরকম পারফরম্যান্স মেলে ধরতে তৈরি ছেলেরা। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে কোনও দল বড় ফুটবল ট্রফি পায়নি। আমরা সেটাই করতে চাই।’ জানা গেল, আইজল থেকে বেশ কিছু সমর্থক আসবে। তবে জেজে বা সঞ্জয় সেন তা নিয়ে মাথা ঘামাতে ব্যস্ত নন। দু’জনেই বলছেন, গতবার বেঙ্গালুরুতে বিপক্ষের সমর্থক ভরতি ছিল। তা সত্ত্বেও আই লিগ জিতেছিলাম। তাই পাহাড়ি সমর্থকরা এলেও ভয় পাচ্ছি না।’
জীবনে প্রথম ফেড কাপ জিততে মুখিয়ে আছেন জেজে: পালিশ করা ফেড কাপটি রাখা ছিল টেবলের উপর। সঞ্জয় সেনের সঙ্গে পোডিয়ামে উঠে বারবার ফেড কাপটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন জেজে। ফেড কাপে তাঁর ভাগ্য অনেকটা বাইচুং ভুটিয়ার মত। ফেড কাপকে স্পর্শ কারার জন্য বাইচুংকে দীর্ঘ ১২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ছয় বছর অল ইন্ডিয়া ফুটবল সার্কিটে আছেন। কিন্তু মোহন বাগানের হয়ে আই লিগ আর চেন্নাইয়ের হয়ে আই এস এল জিতলেও এই ট্রফিটি জেতা হয়নি জেজের। এরই মধ্যে তিনি বাইচুং- সুনীল ছেত্রীর পর দেশের সেরা স্ট্রাইকার হিসাবে নিজেকে চিহ্নিত করেছেন। তাই ফেড কাপ জেতার জন্য ছটফট করছেন। ফেড কাপ অবশ্য মোহন বাগানের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই পাননি। ফেড কাপের আগে ফুটবল বোদ্ধারা দুই জনকে বিভীষণ বলে চিহ্নিত করছেন। একজন হলেন ৪০ বছর ধরে মোহন বাগান সদস্য আর পাঁচ দফায় সবুজ-মেরুনের সিনিয়র- জুনিয়র টিমে কাজ করা জহর দাস। আর মোহন বাগানের মিজো স্ট্রাইকার জেজে। এই কথা উঠলে দুই জনেই লজ্জা পাচ্ছেন। মোহন বাগানের সভাপতি- সচিবের সঙ্গে জহর ছয়ের দশকের প্রথমে হাওড়ার বিবেকানন্দ স্কুলে একই সঙ্গে পড়তেন। বাল্যবন্ধু। কিন্তু গত তিন মাস বাল্যবন্ধুদের সঙ্গে ফোনেও কথা হয়নি। জহর বলছেন, মোহন বাগানের প্রতি আবেগ থাকলেও এটাই পেশাদারিত্ব। জানুয়ারিতে যোগ দিয়ে জেজে ১৮টি গোল করেছেন। কর্নেল গ্লেনের গোল সংখ্যা ১৬। আজ গুয়াহাটিতে দুই জনের স্বাস্থ্যকর লড়াই দেখা গেলে লাভবান হবে মোহন বাগানই।
‘বদনাম’ ঘোচাতে চান প্রণয় হালদার: মোহন বাগান জার্সি গায়ে দিয়ে প্রথম মরশুমেই হিট করেছেন প্রণয় হালদার। মাঝমাঠে অনেকটা ওয়ার্কলোড নিচ্ছেন। ধ্বংসাত্মক মিডিও হিসাবে খেলছেন। তিনি আসার পর মোহন মাঝমাঠে এসেছে বুনোট। আর ধ্বংসাত্মক ফুটবল খেলতে গিয়ে বারবার হলুদ কার্ড দেখছেন প্রণয়। সমর্থকরা তো মজা করে তাঁর নাম দিয়েছেন প্রণয় ‘হলুদ’ হালদার। আইজলের গতি আটকাতে তিনিই বড় সহায়। প্রণয় বললেন, ‘খেলা ১২০ মিনিটও হতে পারে। প্রথমার্ধে হলুদ কার্ড দেখলে সমস্যা বাড়বে। আমি এবার সতর্ক। হলুদ কার্ড দেখার বদনাম ঘুচিয়ে ফেড কাপ জিতেতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘বাগানে এসে একটি ট্রফি সমর্থকদের দিতে পারলে ভালো লাগবে।’
লাওস ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু:প্রায় ২০ জন ফুটবলার নিয়ে লাওস ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করলেন জাতীয় কোচ স্টিভন কনস্টানটাইন। প্রথম দিন প্রায় ২০ জন ফুটবলার উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment