এ বারই আই লিগ থেকে তাদের অবনমন ঘটেছে। অথচ ফেড কাপ ফাইনালে পৌঁছেছে সেই আইজল এফসি-ই! নিঃসন্দেহে এটা ভারতীয় ফুটবলে একটা অভূতপূর্ব ঘটনা। এ রকম উত্থান সহজ নয়। কিন্তু মিজোরামের দলটা সেটাই করে দেখিয়েছে।
যদি আজ আইজল ফেড কাপ জিততে পারে তবে সেটা লেস্টার সিটির চেয়েও বড় কৃতিত্বের হবে। ২০১৪-১৫-তে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে কুড়ি টিমের মধ্যে চোদ্দোতে শেষ করেছিল লেস্টার। তারাই এ বার ইপিএল চ্যাম্পিয়ন!
মোহনবাগানকে হারিয়ে পাহাড়ি দলের ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে অসম্ভব নয়। আর সেটা বাগানের চেয়ে ভাল কেউ আর জানে না। আইজল-ঝড়েই তো এ বার আই লিগে ওদের অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। এই ধাক্কা খাওয়ার পর সেই অর্থে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি কলকাতার বড় দল। যার খেসারত শেষ পর্যন্ত আই লিগ হাতছাড়া করেই দিতে হয়েছে মোহনবাগানকে। যে কারণে আইজলকে আজ হাল্কা ভাবে নেওয়ার কোনও ঝুঁকিই নেবে না সনি-জেজেরা।
গতিই হল আইজলের ফুটবলের আসল অস্ত্র। দশ জন ফুটবলার মিলে প্রচুর ছোটে। ওদের ফাইনালে ওঠা ফ্লুক নয়। কোয়ার্টার ফাইনালে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন টিম বেঙ্গালুরুকে হারিয়েছে হোম-অ্যাওয়ে দু’টোতেই। সেমিফাইনালে গোয়ার ক্লাব স্পোর্টিং ক্লুবকে টপকেছে। ফাইনালে তাই আত্মবিশ্বাসের কোনও রকম অভাব থাকার কথা নয়। তবে ফাইনালে ওরা অধিনায়ক ডেভিডকে পাবে না। যেটা ম্যাচে ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।
আইজলের আজ প্রথম কাজ হওয়া উচিত বাগানের আক্রমণকে আটকে দেওয়া। নিজেদের গোলের মুখ বন্ধ করে দিয়ে। এর ফলে যেটা হয়— গোল না পেয়ে বাগান বিরক্ত হয়ে উঠবে। সেই সময়টার সুযোগ নিতে হবে আইজলকে। তবে যাই হোক, এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, মোহনবাগান বড় দল। আর ওদের প্রধান শক্তি ফরোয়ার্ড লাইন। যার জোরেই ওদের এ মরসুমের আগুনে পারফরম্যান্স। যদি ওরা ম্যাচের শুরুর দিকেই একটা গোল পেয়ে যায়, তবে আইজল চাপে পড়ে যাবে। যে কোনও ম্যাচে তাড়াতাড়ি গোল পেয়ে গেলে খেলার ছন্দই বদলে যায়। আর বিপক্ষে যদি তূলনামূলক দুর্বল টিম থাকে তবে তাদের জন্য সেটা আরও বড় সমস্যা হয়ে ওঠে।
গুয়াহাটি স্টেডিয়ামে আজ আইজলের সমর্থনে প্রচুর দর্শক উপস্থিত থাকবে। গুয়াহাটিতে যে মিজো সম্প্রদায় রয়েছে, তারা সবাই ড্রাম-ভেঁপু নিয়ে হইহই করে আইজলের জন্য গলা ফাটাবে। এমন কী শুনলাম, আইজল থেকেও অনেক সমর্থক আসছে। এটা কিন্তু প্লাস পয়েন্ট হবে পাহাড়ি দলটার কাছে। বলাই যায়, মোহনবাগানকে আজ খেলতে হবে ১২ জনের বিরুদ্ধে। ১১ জন ফুটবলারের সঙ্গে থাকবে আইজলের সমর্থনে তৈরি শব্দব্রহ্ম।
মোহনবাগানের স্ট্রাইকার জেজের জন্য এই ম্যাচ কিন্তু খুব কঠিন। এক দিকে ওর নিজের রাজ্য মিজোরামের জন্য আবেগ, অন্য দিকে ওর কলকাতার ক্লাবের প্রতি দায়িত্ব। নিজের রাজ্যের বিরুদ্ধে ওকে গোল করতে হবে। জেজের জন্য আমার একটা ছোট্ট পরামর্শ থাকল— কোনও দিকে মন না দিয়ে শুধু নিজের পারফরম্যান্সের কথা ভাবো ভাই।
সবশেষে একটাই কথা বলার, আজ যে টিম ভাল খেলবে তারাই যেন ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়।
No comments:
Post a Comment