দীর্ঘদিন ধরে মনের ভিতরে যে স্বপ্ন লালিত হচ্ছিল, অবশেষে তা পূ্র্ণ। শুধু তাই নয়, একের পর এক রেকর্ড গড়ে ইতিহাসের পাতায় ইতিমধ্যেই স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে তঁার নাম। রিও ডি জেনিরো, যেখানে আর কয়েক মাস পরে বসবে অলিম্পিকের আসর, সেখান থেকেই অলিম্পিকের ছাড়পত্র জোগাড় করে এনেছেন তিনি।
এহেন দীপা কর্মকার যে দেশে ফিরে অভ্যর্থনার জোয়ারে ভেসে যাবেন, সে কথা না বললেও হয়। মঙ্গলবার সকালে রিও থেকে দিল্লিগামী বিমান ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর ছুঁতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন একদল মানুষ। সেখানে একদিকে যেমন ছিলেন দীপার শুভাকাঙ্ক্ষীরা, তেমনই প্রচুর সাংবাদিকও ছিলেন। লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে আসার পর দীপার চোখে–মুখে কোথাও দেখা যায়নি ৩৬ ঘণ্টার দীর্ঘ বিমানযাত্রার ক্লান্তি। বরং, যে নতুন স্বপ্ন ক’দিন আগেই ছুঁতে পেরেছেন, তারই ছোঁয়া লেগেছিল চোখে–মুখে। তবে উপস্থিত ছিলেন না দীপার বাবা–মা। আগরতলায় দীপা ফিরলে সেখানে তাঁদের থাকার কথা। মালায়–মালায় শোভিত হওয়ার পর সংবাদিকদের সামনে দীপা এসে বললেন, ‘জিমন্যাস্টিক্স শুরু করার পরের দিন থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল অলিম্পিকে অংশগ্রহণ। স্বপ্ন দেখতাম, একদিন দেশের জার্সি গায়ে পদক জিতব। অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করার পর এবার আরও বেশি পরিশ্রম করা শুরু করব। ইতিহাসের পাতায় যাতে সব সময় থাকতে পারি, সেজন্য নিজেকে একরকম নিংড়ে দেব। এটাই আমার লক্ষ্য।’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলার পর একটু দম নিলেন। মনে করালেন, গত কয়েক মাসে কতটা কঠিন ছিল অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করার পথটা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম তিনের মধ্যে থাকতে পারলেই নভেম্বরে অলিম্পিকের টিকিট হাতে চলে আসত। তবে সামান্য ভুলচুকের কারণে তা হয়নি। এর পরেই হঠাৎ চোট পান পায়ে। ফলে, অলিম্পিকে আদৌ যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে একসময় দেখা দিয়েছিল সন্দেহ। তবে ২৩ বছরের মেয়েটি জীবনের বহু বাধা অতিক্রম করেছেন। তাই এটিও তঁাকে সমস্যায় ফেলতে পারেনি। রিও–তে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সে ৫২.৬৯৮ স্কোর করেই বুঝে গিয়েছিলেন, তঁাকে আর কেউ আটকাতে পারবে না। দীপার আগে ১১ জন ভারতীয় জিমন্যাস্ট অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫২–য় দু’জন, ১৯৫৬–য় তিনজন এবং ১৯৬৪–তে ছ’জন। তবে প্রত্যেকেই ছিলেন পুরুষ। দীপা শুধু প্রথম মহিলা জিমন্যাস্ট হিসেবেই যাচ্ছেন না, পাশাপাশি ৫২ বছরের খরাও কাটালেন ভারতের হয়ে। তবে এত প্রশংসা পেয়েও মাটিতেই পা রয়েছে ত্রিপুরার মেয়ের। এখনই নিজেকে বড় কিছু ভাবতে রাজি নন। বললেন, ‘আমি নিজেকে মোটেই তারকা ভাবছি না। এরকম কিছু করিনি। আমার কাজ পরিশ্রম করে দেশের হয়ে পদক নিয়ে আসা।’ এই প্রসঙ্গে স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার পরিকাঠামো নিয়েও উচ্ছ্বসিত দীপা। বললেন, ‘দিল্লির পরিকাঠামো যথেষ্ট ভাল। ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে যেখানে আমরা অনুশীলন করি, সেখানে ফোম পিট (অ্যাথলিট লাফ দেওয়ার পর যে নরম জায়গায় পড়েন) রয়েছে অনেকগুলো। সাই আমাকে বলেছে, আরও সুবিধের ব্যবস্থা করে দেবে।’ দীপার একটাই অনুরোধ, তঁার এই চলার পথে সবাই যেন এগিয়ে আসেন।
Source - Aajkal
Source - Aajkal
No comments:
Post a Comment