Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Saturday, May 7, 2016

বাগানের চার দিকে সবুজ, তবে আমি মুগ্ধ উত্তর-পূর্ব ভারতে | ভাইচুং ভুটিয়া | আনন্দবাজার

চলতি ফেড কাপে সবচেয়ে বড় চমক দিয়েছে উত্তর পূর্ব ভারতের দু’দল। আইজল এফসি আর শিলং লাজং। ওদের ঝোড়ো পারফরম্যান্সেই তো বেঙ্গালুরু এফসি ও ইস্টবেঙ্গলের মতো দুই হেভিওয়েট টিম প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে গিয়েছে। দুই পাহাড়ি দলের খেলা দেখে আমি তো  মুগ্ধ।

উত্তর-পূর্ব ভারতের টিমের উত্থানের কারণ কী? এ প্রশ্ন আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়। আসলে এটা পুরোটাই নির্ভর করে পরিবেশ, আবেগ আর ফুটবলের প্রতি আকর্ষণের উপর। উত্তর পূর্ব ভারতের মানুযের মধ্যে ফুটবলের যে নেশা রয়েছে, সেটাই বোধহয় দেশের বাকি জায়গাগুলোর সঙ্গে ওই অঞ্চলের একটা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে খেলাটায়। আমাদের দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের যে কোনও জায়গায় গেলেই দেখতে পাবেন, স্পোর্টসকে ঘিরে কী রকম উন্মাদনা! হয় স্পোর্টস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, নয়তো কোনও না কোনও গেম খেলতে ব্যস্ত রয়েছে সেখানকার মানুষ।
আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ফেড কাপে বেঙ্গালুরুকে ঘিরে বিরাট প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তারা বিশ্রী ভাবে প্রথমে অ্যাওয়ে এবং পরে হোম ম্যাচেও হেরে ছিটকে গিয়েছে টুর্নামেন্টের গোড়াতেই। বেঙ্গালুরুতে গিয়ে সুনীল ছেত্রীদের হারানো কিন্তু মোটেও সহজ নয়। ওখানে গ্যালারি ভরে সমর্থকেরা আসেন বেঙ্গালুরুর ম্যাচ দেখতে। গোটা ম্যাচ জুড়ে তাঁদের চিৎকার বিপক্ষ টিমের মনোবল ভেঙে দিতে যথেষ্ট। সেই শব্দব্রহ্মের সঙ্গে যোগ হয় মাঠের ভেতর বেঙ্গালুরুর দাদাগিরি। সেই সব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে ওদের মাঠেই বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে এসেছে আইজল। বুঝিয়ে দিয়েছে কঠিন পরিস্থিতি হলেও অসম্ভব বলে ফুটবলে কিছুই নেই। পাহাড়ি টিমকে তো তাই বাহবা দিতেই হবে।
আই লিগে আইজলের অবনমন হয়ে গিয়েছে ঠিকই, তবে তারা দেখিয়ে দিয়েছে  স্থানীয় ফুটবলারদের প্রতিভার প্রাচুর্য। এখানেই কিন্তু আইজলের কাজ শেষ হয়ে যাবে না। আরও পথ যেতে হবে। আপাতত যেটুকু ওরা করতে পেরেছে, সেটাই বা কম কী!
এ দিকে শিলংয়ের মাঠে লাজং এফসির বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের রেকর্ড যদি দেখা যায়, তবে সেটা কলকাতার বড় ক্লাবের জন্য অস্বস্তির কারণ হবে। ঘরের মাঠে লাজংয়ের বিরুদ্ধে লাল-হলুদ ব্রিগেডের পারফরম্যান্স খারাপ নয়। তবে ফেড কাপে হোম এবং অ্যাওয়ে ম্যাচ মিলিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে চমৎকার টেক্কা দিয়েছে লাজং।
আমার নিজের মনে হয়, এই হোম এবং অ্যাওয়ে ম্যাচের নিয়মটা বেশ মজাদার। এই নিয়মের জন্য একটা টিম ঘুরে দাঁড়ানোর দ্বিতীয় সুযোগ পেয়ে যায়। স্বভাবতই একে অপরকে দোষ দেওয়া বা অভিযোগ করার কোনও বিষয় থাকে না।
আমার মতে দুর্ভাগ্যক্রমে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি মোহনবাগান। কিন্তু ফেড কাপে এখনও পর্যন্ত বাগানের চার দিকে শুধুই সবুজ। বিশ্বের সব টিমের ক্ষেত্রেই কিছু খারাপ সময় যায়। যেটা মোহনবাগানের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। কিন্তু এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই, মোহনবাগান শুধু শক্তিশালী নয়, ‘সুপার স্ট্রং’ টিম।
আই লিগের শেষ ম্যাচে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়িয়েছিল মোহনবাগান। তার পর ফেড কাপে সালগাওকরের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। ওরা মাঠে নেমে বুঝিয়ে দিয়েছে, এখনও ফুরিয়ে যায়নি।
সেমিফাইনালে মোহনবাগানই ফেভারিট। তবে ফুটবলে ভবিষ্যদ্বাণী চলে না। বিশেষত আইজল আর লাজংয়ের পারফরম্যান্স দেখার পর তো সব হিসেবই উল্টে গিয়েছে। আমি তো অপেক্ষায় রয়েছি টানটান উত্তেজনাপূর্ণ দু’টো সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখার জন্য। 

No comments:

Post a Comment