বিদেশি কোচকে একহাত ভাস্করদের
কাজের কাজটি করেও সাহেব কোচের তালিকায় তিনি যেন চোখের বালি!
ইস্টবেঙ্গল জার্সি গায়ে কলকাতা লিগ এবং আই লিগ ডার্বিতে মোহনবাগানের জালে বল ঢুকিয়েছেন চার বার। কিন্তু সূত্রের খবর, লাল-হলুদ কোচ ট্রেভর মর্গ্যান পরের মরসুমের টিম গড়তে গিয়ে যে তালিকা তৈরি করেছেন তাতে নাকি জায়গা পাকা নয় কোরিয়ান মিডিও ডু ডংয়ের।
সেই জায়গায় ব্রিটিশ কোচ দরবার করেছেন সালগাওকরের স্কটিশ স্ট্রাইকার ড্যারেল ডাফির জন্য। এ বারের আই লিগে সালগাওকর জার্সি গায়ে ১৩ ম্যাচে ১১ গোল করেছেন যে বিদেশি। তাই ডংয়ের পরিবর্তে ডাফি মনে ধরেছে মর্গ্যানের। যা নিয়ে অবশ্য দ্বিধাবিভক্ত লাল-হলুদ কর্তারা। ফুটবলমহলের একটা বড় অংশের প্রতিক্রিয়া, ডাফির বয়স ৩২। ডং সেখানে ২২। বয়স এক্ষেত্রে একটা বড় ফ্যাক্টর। আর বয়সের কারণে যদি এ বারের আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা র্যান্টি পরের মরসুমের ইস্টবেঙ্গল টিম থেকে বাদ পড়েন, তা হলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ডাফি আসেন কী ভাবে?
মরসুমের মাঝে ইস্টবেঙ্গল সচিব জানিয়েছিলেন, ডংয়ের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করেছে ক্লাব। কিন্তু ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য সোমবার বলেছিলেন, ডংয়ের সঙ্গে ক্লাবের চুক্তি তিন বছরের নয়। বিদেশি ফুটবলারটির এজেন্ট নাকি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে রাজি হননি। বুধবার সন্তোষবাবু আবার বললেন, ‘‘ডংয়ের সঙ্গে ক্লাবের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থাকতেও পারে। তবে কোচকে পরের মরসুমের টিম লিস্ট দিতে বলা হয়েছে। এখনও তা দেননি তিনি।’’
যদিও সূত্রের খবর, ডাফিকে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই ক্লাব কর্তাদের তদ্বির করেছেন মর্গ্যান। সঙ্গে সালগাওকরের আর এক স্ট্রাইকার হাওকিপ— আই লিগে যিনি গোয়ায় গোল করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে, স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ার স্ট্রাইকার ভিক্টোরিনো ফার্নান্ডেজ এবং মিডিও প্রতীশ শিরোদকর-ও নাকি মর্গ্যানের তালিকায় রয়েছেন।
ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারও এ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ক্লাবের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দল বা কোচ নির্বাচন হয়। বিশেষ কোনও ফুটবলার বা কোচ প্রসঙ্গে মিডিয়ার কাছে কিছু বলতে দায়বদ্ধ নই।’’
লাল-হলুদ কর্তারা কিছু না বললেও সোচ্চার হয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের অনেক প্রাক্তন। গৌতম সরকার, সমরেশ চৌধুরীর মধ্যে প্রথম জন এ দিন বললেন, ‘‘ডংকে ছেড়ে দিলে কিন্তু বোকামি হবে।’’ দ্বিতীয় জন বলছেন, ‘‘বত্রিশের ডাফির চেয়ে বাইশের ডং স্বাভাবিক ভাবেই বেশি কার্যকরী। সাহেব কোচ ডংকেই আরও ধারালো করে তুলুন না!’’ ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় আরও চাঁছাছোলা ভাবে বলে দিলেন, ‘‘কেন প্রতিবার টিম ব্যর্থ হলেই মর্গ্যানের নামটা ওঠে সেই অঙ্কটাই তো বুঝি না। হয়তো কোনও কোনও কর্তা ওঁকে চান। আর মর্গ্যান তো বলেছিল আই লিগ সে ভাবে ফলো করেনি। পরের বছরের টিমটা তা হলে বাছবে কী ভাবে? মনে রাখবেন, ওর কোচিংয়েই কিন্তু আই লিগ থেকে ডেম্পো নেমে গিয়েছিল। ওর কেরল ব্লাস্টার্সও গত বার আইএসএলে সবার পিছনে শেষ করেছে। এ বার এসে তিন-তিনটে লাজং ম্যাচ জেতাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গলকে। তা হলে এ রকম এক জন ব্যর্থ কোচের পিছনে এত টাকা খরচের মানেটা কী?’’ মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য আবার বলছেন, ‘‘ভারতীয় ফুটবলে নব্বই মিনিট যারা দৌড়য় তারাই এগিয়ে থাকে। ডং সেই জায়গায় ডাফির চেয়ে এগিয়ে।’’
যা মানছেন লাল-হলুদ ফুটবল সচিবও। বলছেন, ‘‘কম বয়সিদের কোচ নিজের প্ল্যানিং অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে সেটা হয় না অনেক ক্ষেত্রেই।’’
তা হলে সামনের মরসুমে লাল-হলুদে ডং, না ডাফি? মুখে কুলুপ কর্তারা দেখিয়ে দিচ্ছেন মর্গ্যানকে। কোচ এ দিন কর্তাদের সঙ্গে বসেছিলেন। ফুটবল সচিব বলছেন, ‘‘কোচ চুক্তিপত্র নিয়ে দেশে যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ইস্টবেঙ্গলে পরের মরসুমে কোচিংয়ের ব্যাপারেই নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন। তখনই দল নিয়ে চূড়ান্ত কথাবার্তা হবে।’’
No comments:
Post a Comment