বস্তির সেই ঘিঞ্জি পরিবেশ, অস্বাচ্ছল্যের সেই এবেলা-ওবেলা, সেই অপ্রশস্ত
গলির ভেতর দিয়ে বল পায়ে এগিয়ে যাওয়া, বলের দখল নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সেই
ধস্তাধস্তি— চোখের সামনে যেন ফিরে এলো হঠাৎই! মনে হল, ফিরে এসেছে আস্ত
ছেলেবেলাটাই! আর ফিরে আসতেই, সব আগল ভেঙে গেল। কে দেখছে, কী দেখছে, কী
ভাবছে— সব প্রশ্ন, সব ভাবনা, তখন বড়ই অপ্রয়োজনীয়। নিজেকে বাঁধার এতটুকু
চেষ্টা করলেন না তিনি। বরং ছোট্ট শিশুর মতই কেঁদে উঠলেন ফুঁপিয়ে! দু’গাল
বেয়ে নামতে শুরু করল ধারা! আবেগের! কে তিনি? কেন এভাবে কাঁদছেন? কী
করেই বা হঠাৎ করে তাঁর চোখের সামনে ফিরে এলো অতীত?
তিনি, পেলে। ফুটবল
সম্রাট। নিজের বায়োপিক, ‘পেলে: বার্থ অফ আ লিজেন্ড’-এর প্রিমিয়ার
শো-তে গিয়েই আবেগে ভাসলেন তিনি। এই বায়োপিকের ডিরেক্টর দুই ভাই জেফ এবং
মাইকেল জিম্বালিস্ট। আমেরিকান এই দুই ভাই বিখ্যাত, ফুটবল তথ্যচিত্র, ‘দ্য
টু এসকোবার’-এর জন্য। নিউ ইয়র্কে প্রিমিয়ার শো-তে গিয়ে পেলে এতটাই
আবেগতাড়িত ছিলেন যে বলেই ফেললেন, ‘জানি না, আমার জীবনের অভিজ্ঞতা এমন হল
কেন? কিংবা আমার জন্য এমন অভিজ্ঞতা বরাদ্দ হল কেন? জানেন, কোনওদিন ভাবিনি
আমি ‘পেলে’ হব। কোনওদিন ভাবিনি, সারা বিশ্বের মানুষ আমাকে চিনবেন! শুধু
চেয়েছিলাম, ফুটবল খেলতে। আর বাবার মত হতে।’ পেলের বাবাও ছিলেন ফুটবলার।
ফ্লুমিনেন্সের হয়ে খেলতেন ডনডিনহো। নিজের জীবনের যাবতীয় কিছু এমনকি বিখ্যাত
বাইসাইকেল কিক-এর জন্যও বাবাকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন পেলে। বলেছেন, ‘প্রচুর
প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাকে। বাবা বারবার বলতেন, প্র্যাকটিস করো,
প্র্যাকটিস করো। আসলে বাবা নিজেও ভাল ফুটবলার ছিলেন। অনেক গোল করেছেন।
ব্রাজিলে ফুটবলার হিসেবে ওঁর নাম-ডাক ছিল। উনি আমার জীবনের রোল মডেল।
বরাবর ওঁকে নকল করার চেষ্টা করেছি। বাদবাকি যা যা ঘটেছে, তা কীভাবে ঘটেছে,
আমি জানি না। ব্যাখ্যাও দিতে পারব না।’ ছোটবেলার ঘটনাগুলো যখন চোখের সামনে
ফুটে উঠছিল, মনের মধ্যে কী চলছিল? পেলে বলেন, ‘কেরিয়ারের একেবারে শুরুর
দিনগুলো মনে পড়ে গিয়েছিল। আমি এমনিতেই আবেগপ্রবণ। কেঁদে ফেলি। এদিনও নিজেকে
সামলাতে পারিনি। ষোলো বছর বয়সে যখন জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলাম, স্বপ্নের মত
লেগেছিল। সব কিছু আবার মনে পড়ে গেল।’ এখানেই শেষ নয়, পেলে নিজের টুইটার
অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘আমার সিনেমা, খুব শিগগিরি মুক্তি পেতে চলেছে।
আমেরিকায়। ১৩ মে-র পর থেকে এই সিনেমাটি দেখার ও এর ভিডিও সংগ্রহ করার
সুযোগ আপনারা পাবেন।’ যদি ফুটবল না খেলতেন, কী করতেন? কখনও ভেবেছেন কী?
পেলের কথায়, ‘যদি ফুটবল না খেলতাম হয়ত গান বাজনা করতাম। গান করতে, কম্পোজ
করতে আমার বেশ লাগে। গিটার, ভায়োলিনের সুরও দারুণ লাগে। হয়ত তখন কম্পোজার
হতাম।
No comments:
Post a Comment