Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Thursday, May 5, 2016

সনি-ঝড়ে সহজেই ফেড কাপের শেষ চারে মোহন বাগান | বর্তমান

মোহন বাগান-৪                                সালগাওকর-০
(কাটসুমি, সনি-২, জেজে)
ম্যাচ শুরুর আগে ওয়ার্ম-আপ চলছে মোহন বাগানের। গার্সিয়ার তত্ত্বাবধানে গা ঘামাচ্ছেন জেজে-বিক্রমজিৎরা। রয়েছেন সনিও। মাঠের অন্য প্রান্তে সালগাওকর কোচ মারিও সোরেসও শেষ মুহূর্তের পরামর্শ দিতে ব্যস্ত। এমন সময় করণজিতের হাই কিক উড়ে এল বাগান ফুটবলারদের দিকে। পাশে দাঁড়ানো আজহারউদ্দিনকে সরিয়ে দুরন্ত রিসিভে বল নিয়ন্ত্রণে আনলেন সনি। ঠিক যেমন সাপিনীকে পোষ মানায় ওঝা। তারপর শুরু হল জাগলিং। এক, দুই, তিন, চার…. থামছে আর না। গ্যালারিতে হাজির সবুজ-মেরুন সমর্থকদের হাততালিরও যেন বিরাম নেই। কিছুক্ষণ বল নাচানোর পর লম্বা শট সনির। যা আশ্রয় নিল করণজিতের হাতে।
ওয়ার্ম-আপের মতো ৯০ মিনিটও মাতালেন মোহন বাগানের হাইতিয়ান তারকা। প্রায় একাই দুমড়ে মুচড়ে দিলেন সালগাওকরকে। গ্যালারিতে আপশোস, ‘সনি চোট না পেলে আই লিগ আমরাই জিততাম। ’

দুরন্ত গতি অনবদ্য স্কিলের সংমিশ্রণে নিকোলাও কোলাসো-এডেরদের নাভিশ্বাস তুলে দেন ম্যাচের সেরা সনি। তাঁর পায়ে বল পড়লেই থরহরি কম্প হয়েছে সালগাওকর রক্ষণ। দু’টি গোল করা ছাড়াও একটি করালেন কাটসুমিকে দিয়ে। ঘরের মাঠে গোয়ান ক্লাবটিকে দুরমুশ করে (দুই পর্ব মিলিয়ে মোহন বাগানের পক্ষে ফল ৭-২) পয়মন্ত ফেডারেশন কাপের শেষ চারে উঠল মোহন বাগান। এবার লাজং এফসি’র চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে সঞ্জয় সেন-ব্রিগেডকে।
তিলক ময়দানে প্রথম দফার ম্যাচ মোহন বাগান জিতেছিল ৩-২ ব্যবধানে। তাই সেমি-ফাইনালে পৌঁছাতে হলে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে সালগাওকরের প্রয়োজন ছিল ২-০ ব্যবধানে জেতা। কিন্তু জয় তো দূর অস্ত, সনি-কাটসুমিদের দাপটে ড্রয়ের স্বাদও পেলেন না ড্যারেল ডাফি-এমবারগারা। প্রথম একাদশে এদিন সনির পাশাপাশি সুযোগ পেয়েছিলেন বিক্রমজিৎ সিং এবং আজহারউদ্দিন মল্লিক। শুরু থেকেই উইং নির্ভর ফুটবল উপহার দেয় মোহন বাগান। প্রারম্ভিক পর্বে সনির হেড কোনওরকমে বাঁচান করণজিৎ। তবে ২৫ মিনিট পর্যন্ত দুর্গ অক্ষত রাখতে পারে সালগাওকর। লেনির ‘হসপিটাল পাস’ ধরে বাঁ দিক থেকে সনি-ঝড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সালগাওকর রক্ষণ। তাঁর মাপা মাইনাস ফাঁকা গোলে ঠেলে দেন কাটসুমি (১-০)। দ্বিতীয় গোল বিরতির অব্যবহিত আগে। এবারও জাপানি-হাইতিয়ান কম্বিনেশন। কাটসুমির বাড়ানো বল নিখুঁত প্লেসিংয়ে জালে জড়ান সনি (২-০)। প্রথমার্ধে সালগাওকরের যাবতীয় আক্রমণ হয়েছে প্রীতম কোটালের দিক দিয়ে। জ্যাকিচাঁদ সিং একাধিকবার তাঁকে ঘাস ধরিয়েছেন। রক্ষণেও লুসিয়ানো ও কিংশুকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তার সুযোগ নিতে পারেননি ডাফিরা। ৩১ মিনিটে স্কটের পাস থেকে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন এমবারগা। অসহায় দেবজিতকে পেয়েও তিনি বড়লোকের বাউন্ডুলে ছেলের মতো গোলপোস্টের অনেক উপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন। এই পর্বে ডাফিকে রুখতে ফাউল করতে হয়েছে কিংশুক-ধনচন্দ্রদের। ২২ মিনিটে জেজের অ্যাক্রোব্যাটিক সাইড ভলি এডেরের গায়ে না লাগলে কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়তে হত করণজিতকে।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রারম্ভিক পর্বেও মোহন বাগানের আধিপত্য বজায় ছিল। ৫২ মিনিটে দলের তৃতীয় এবং নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন সনি। জেজের পাস ধরে দুরন্ত ইনসাইড ডজে মার্কারকে বোকা বানানোর পর বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ তাঁর (৩-০)। তিন গোলে এগিয়ে থাকার জন্যই সম্ভবত আংশিক আত্মতুষ্টি গ্রাস করে লেনি-কিংশুকদের। ৬৪ এবং ৬৫ মিনিটে কেলভিন এমবারগা এবং জ্যাকিচাঁদ সিংয়ের প্রয়াস পোস্টে না লাগলে চাপে পড়ত মোহন বাগান। এখানেই শেষ নয়। দেবজিতের ভুলে গ্যাব্রিয়েল বল পেয়েও পোস্টে মারেন।
৭২মিনিটে সনিকে তুলে নিয়ে কর্নেল গ্লেনকে মাঠে নামান সঞ্জয়। এর মিনিট পাঁচেক আগে সালগাওকরও সত্যাসেন সিংকে ব্যবহার করে ব্যবধান কমাতে চায়। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ পকেটে পুরে ফেলেছেন সঞ্জয়ের ছেলেরা। শেষদিকে ব্রায়ান মাসকারেনহাসের প্রয়াস গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন রাজু গায়কোয়াড়। সংযোজিত সময়ে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে করণজিতের হাতে মারেন বিক্রমজিৎ। তরে পরের মিনিটেই বিপক্ষের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন জেজে (৪-০)।
সনির স্কিল, কাটসুমির লড়াই এদিন ঢেকে দিল মোহন বাগানের রক্ষণ ও সেন্ট্রাল মিডফিল্ডের গলদ। লাজংয়ের বিরুদ্ধে সেমি-ফাইনালের আগে এই দিকগুলিতে নজর দিতে হবে চেতলার বাসিন্দাকে। বিশেষ করে প্রীতম কোটাল, লেনি রডরিগস ও ধনচন্দ্র সিংদের পারফরম্যান্সে প্রভূত উন্নতি প্রয়োজন।
মোহন বাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, কিংশুক (রাজু), লুসিয়ানো, ধনচন্দ্র, কাটসুমি, লেনি (শৌভিক চক্রবর্তী), বিক্রমজিৎ, সনি (গ্লেন), আজহারউদ্দিন ও জেজে।
সালগাওকর: করণজিৎ, নিকোলাও কোলাসো (ব্রায়ান মাসকানেরহাস), এডের, লেনি পেরেরা, রিগান সিং, গ্যব্রিয়েল(সত্যাসেন), শরণ সিং, মার্টিন স্কট, জ্যাকিচাঁদ, এমবারগা ও ডাফি।

No comments:

Post a Comment