লাল–হলুদের মরশুম আপাতত শেষ। লোবোর মতো ভিন রাজ্যের ফুটবলাররা কেউ কেউ
আগেই পা বাড়িয়েছেন ঘরে চোট থাকায়। এমন হতশ্রী পারফরমেন্সের পর বাকিরা শেষ
মাসের মাইনে পাওয়ার আশায় বসে থাকবেন কিনা সন্দেহ। তবে একবার কলকাতা ছাড়লে
বকেয়া মাইনে পাওয়া যে কঠিন হবে সেটা বিলক্ষণ বুঝছেন। কারণ ইস্টবেঙ্গল সচিব
কল্যাণ মজুমদার তো বলেই দিয়েছিলেন, নিয়মিত মাইনে পেয়ে পেয়ে এরা এত
নিশ্চিন্ত যে পারফর্ম করতেই ভুলেছে।
মাইনে না পেলেই বরং ভাল খেলার তাগিদ
অনুভব করবে। ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য সাফ বলেছেন, ‘মর্গানকে দু’বছরের
চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েই কলকাতা এনেছি, তাই আগামী মরশুমে তাঁকে সামনে
রেখেই এগোব। তবে ফুটবলারদের কেউ কেউ থাকবে, কেউ কেউ বাদ পড়বে।’ দল গঠন, কোচ
নিয়োগ নিয়ে এখনই কোনও কথা বলার মতো মেজাজে নেই কর্তা দেবব্রত সরকার। বলেন,
‘এই হতাশাজনক পারফরমেন্সের পর সবাই খুব আপসেট। চার–পাঁচ দিন যাক, তারপর
এসব নিয়ে কথা বলব।’ একটা বড়সড় ছাঁটাই হবে বুঝেই খাবড়ার মতো ফুটবলার
ইতিমধ্যেই লাল–হলুদ জার্সি ছেড়ে আই এস এলের দল চেন্নাইয়াইন এফ সি–র সঙ্গে
সরাসরি চুক্তি সেরে ফেলেছেন। লোবো, জোয়াকিম, রবার্ট, দীপক, শেহনাজের মতো
ফুটবলারদের পরের মরশুমে ক্লাবকর্তারা আর রাখতে চাইবেন এমন ইঙ্গিত মিলছে না।
মেহতাবের সঙ্গে অবশ্য ক্লাবের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আছে। তাছাড়া মেহতাব
নিজেও লাল–হলুদ ছাড়তে নারাজ। আই এস এলের দল কেরালা ব্লাস্টার্স তাঁকে
নিচ্ছে। তা–ও বললেন, ‘ইস্টবেঙ্গল থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। তাই এখান থেকে
খেলেই অবসর নেব। ২০১০ সাল থেকে বারবার আই লিগ জেতার কাছাকাছি পৌঁছেও তা
জিততে পারিনি। তাই খেলা ছাড়ার আগে লাল–হলুদ জার্সিতে একবার আই লিগ জিততে
চাই।’ সাইড ব্যাক সৌমিকের গলাতেও এক সুর। দেশীয় ফুটবলারদের ঘাড়েই যে শুধু
কোপ পড়বে এমন নয়, মেন্ডি, বেলোদের যে ক্লাব রাখবে না, সেটা বলাই বাহুল্য।
কোরীয় ডংয়ের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করেছিলেন কর্তারা কলকাতা লিগ জেতার
পরই। তাঁকে রেখে দেওয়ার পক্ষপাতী কর্তারাও। কিন্তু রন্টি থাকতে চাইলেও
তাঁকে রাখা হবে কিনা, সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বিশেষ করে ফেডারেশন কাপে
ব্যর্থতার পর সতীর্থদের প্রতি যে তোপ দেগেছেন রন্টি, তাতে তিনি কতটা
টিমম্যান তা নিয়ে ক্লাবের অন্দরমহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। রন্টি নিজে অবশ্য
বলেছেন, ‘আমি আই লিগ দিয়ে ইস্টবেঙ্গল ছাড়তে চাই।’ এদিকে, গোল হজমের জন্য
ডিফেন্ডারদের রন্টির দোষারোপ নিয়ে অখুশি অনেকেই। তবে কেউই সরাসরি লড়াইয়ে
যেতে চান না। এমনকী, মর্গানও যেভাবে ডিফেন্ডারদের ডিসিপ্লিনের অভাবে গোল
হজমের কথা বলেছেন, সেটাও তাঁরা মেনে নিয়েছেন। স্টপার অর্ণব মণ্ডল তো সব
বিতর্ক এড়িয়ে বলেন, ‘কে কী বলল সেটা বড় কথা নয়। আমি ডিফেন্সে খেলেছি, বিশেষ
করে মরশুমের সবচেয়ে বেশি ম্যাচে, তাই গোল হজমের মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে
এটাও বলছি, সবাই যদি নিজেদের কাজ ঠিকঠাক করত, তাহলে আমাদের এই অবস্থা হত
না। আমরা কখনওই একটা টিম হিসেবে খেলতে পারিনি। মর্গান স্যার ঠিকই বলেছেন।’
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে পরের মরশুমের চুক্তি রয়েছে অর্ণবের। তবে আই এস এলে এবার
কোন দলে খেলবেন সেটা ঠিক করে উঠতে পারেননি। হাবাস এফ সি পুনে সিটি দলের
কোচ হওয়ার পর অর্ণবের কাছে ওই দলে খেলার ভাল প্রস্তাব এসেছে। সেটা অর্ণবকে
ভাবাচ্ছে। দলের আর এক ডিফেন্ডার দীপক মণ্ডলও মনে করেন, মর্গান যেটা অনুভব
করেছেন, সেটা ঠিক। বলেন, ‘মর্গান তো খুব সামান্য সময়ই পেয়েছেন। আমরা তো ভাল
খেলছি না অনেক দিন ধরেই। উনি এসে ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা
সেটা ঠিকমতো তুলে ধরেতে পারিনি। গোল হজমের জন্য ডিফেন্ডারদের দায় তো নিতেই
হবে। জানি আমাদের একটা ভুল মানেই বিপদ। কিন্তু স্ট্রাইকাররা কি সব ম্যাচে
গোল পেয়েছে? মিস করেনি সুযোগ? পরস্পরকে দোষারোপ না করে দলের কী করলে ভাল
হবে, সেটাই ভাবা উচিত।’ সময়মতো মাইনে পেয়েও কাজ করে না, সচিবের এই মন্তব্যে
কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি মেহতাব, অর্ণবরা। দীপক অবশ্য বলেন, ‘ক্লাব
আমাদের টাকা দেয়, অথচ আমরা রেজাল্ট দিতে পারি না। তাহলে কথা তো শুনতেই
হবে।’
No comments:
Post a Comment