Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Monday, May 9, 2016

নতুন ঈশ্বর আর নতুন পাহাড়ি বিছের যুগলবন্দি | প্রীতম সাহা | আনন্দবাজার

মোহনবাগান-৫ জেজে-হ্যাটট্রিক, বিক্রমজিৎ, আজহারউদ্দিন)

লাজং এফসি-০

হোসে র‌্যামিরেজ ব্যারেটো থেকে বোধহয় ‘কোনও এক’ হোসে র‌্যামিরেজ ব্যারেটো বলার সময় চলে এল মোহনবাগানে!
বছর চারেক আগের কথা। সবুজ-তোতার অবসরের পরে বাগানে এক রকম অন্ধকার নেমে এসেছিল। ক্লাবকে অনাথ করে ‘ঈশ্বর’ চিরতরে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন যে! ব্যারেটোর জন্য সমর্থকদের সেই আর্তনাদ আজও কান পাতলে শোনা যায় বাগান তাঁবুতে।   

কিন্তু এ বার নতুন করে স্বপ্ন দেখার পালা। কেন না ‘ঈশ্বরের’ অবসর হয় না। নতুন রূপে তিনি আবার ফিরে আসেন। ভারতীয় ক্রিকেট যেমন সচিন তেন্ডুলকরের পরে বিরাট কোহালির মধ্যে নতুন বিস্ময় প্রতিভার সন্ধান পেয়েছে, তেমনই সবুজ-মেরুনে নতুন ঈশ্বর এখন সনি নর্ডি। হাইতিয়ান মলম দিয়েই ব্রাজিলিয়ান ক্ষতে প্রলেপ লাগাচ্ছে এখন বাগান।
এই ম্যাচের স্কোরলাইনে সনির নামগন্ধ নেই। তবু রবিবাসরীয় ফেড কাপ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে পাহাড়় ভাঙার প্রধান চরিত্র তিনি-ই। পাঁচটা গোলের রাস্তাই সনির তৈরি। কোনওটায় ফাইনাল পাস, কোনওটায় ওয়াল খেলা, কোনওটায় থ্রু-পাস— সবই বাগানের দশ নম্বর জার্সির।
লাজং কোচ প্রথম চল্লিশ মিনিট পেন ওরজিকে দিয়ে বিপক্ষের জন্য মরণ-ফাঁদ তৈরি রাখছিলেন মাঝমাঠে। সেই ফাঁদ একাই ভেঙে চুরমার করে দিলেন সনি। বিপক্ষের ‘ডাউন দ্য মিডল’ গতি বাড়িয়ে খেলার স্ট্র্যাটেজিকে নিজের পাওয়ার আর স্কিল দিয়ে তছ নছ করে দিলেন হাফটাইমের ঠিক আগে হাইতিয়ান মিডিও। আর তার পরেই শুরু বাগানের গোলের সুনামি। যে সুনামি চলছে গত চার ম্যাচ টানা। আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের হারানো ইস্তক। শেষ চার ম্যাচে ১৭ গোল করল বাগান।
রাতের দিকেও ফোন ধরে তাঁর সল্টলেকের বাড়ি থেকে বর্ষীয়ান পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, ‘‘এ রকম ভুরি ভুরি গোল সত্তর দশকে আমার কোচিং জমানায় করত মোহনবাগান। তখন দু’-এক গোলে জিতলে সেটা অসম্পূর্ণ জয় ধরা হত আমাদের ড্রেসিংরুমে।’’
বর্তমান বাগান কোচের অবশ্য সে রকম কোনও থিওরি নেই। উল্টে সঞ্জয় সেনের কাছে জয়টাই আসল। কত গোলে জয় এল সেটা নয়। তবু বরাবর টিমগেমের পূজারি সঞ্জয়ও এ দিন সনি তো বটেই আরও একজনের জয়গান উচ্চস্বরে গেয়ে গেলেন ম্যাচ শেষে। ‘‘জেজে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ। সামনের অনেক বছর ও-ই বাকিদের পথ দেখাবে,’’ বারাসত ছাড়ার আগে বলে গেলেন সঞ্জয়।
কথাটা আদৌ ভুল বলেননি চেতলা বাসিন্দা বাঙালি ফুটবল কোচ। ভাইচুংয়ের পরে ফের কোনও পাহাড়ি বিছের কামড় এত বিষাক্ত দেখাচ্ছে ভারতীয় ফুটবলে। জেজে ইদানীং যেমন ঝলমলে জাতীয় দলের জার্সিতে, তেমনই উজ্জ্বল ক্লাবের জার্সিতে। ভাইচুংয়ের মতোই গোলটা দুর্দান্ত চেনেন। অ্যান্টিসিপেশন দারুণ। ভাইচুং অবশ্য ম্যাচটা দেখার পরেও বলছেন, ‘‘কেউ কারও মতো হয় না। তবে জেজে-ই এখন সেরা ইন্ডিয়ান স্ট্রাইকার, কোনও সন্দেহ নেই।’’
সঞ্জয় তাঁকে বুদ্ধি করে ব্যবহারও করলেন এ দিন। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুললেন। লাজং কোচ যখন সনিকে আটকাতে ব্যস্ত তখন বাগান কোচ পাহাড়ি প্রতিপক্ষকে সমতলে নামিয়ে আনলেন পাহাড়ি ঝর্না ছুটিয়ে—  তোদের গতি আছে তো আমরাও দুরন্ত এক্সপ্রেস। তোদের প্রচুর দম তো আমরাও অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নেমেছি। সনি-জেজে যুগলবন্দিতে চোখে সর্ষেফুল দেখার অবস্থা তখন লাজংয়ের। পাহাড়ি ‘বাবুমশাই’-এর ভাগ্য ভাল যে, পাঁচ গোলেই এ দিন ফুলস্টপ দিয়েছিলেন বিক্রমজিৎ-আজহারউদ্দিনরা। রেফারি যদি আরও একটু মন দিয়ে খেলাতেন, তা হলে শেষ দিকে একটা নিশ্চিত পেনাল্টি পাওনা ছিল বাগানের।
মাতৃদিবসে জেজে তাঁর হ্যাটট্রিক মা নুন পুই-কে উৎসর্গ করে গেলেন। সঙ্গে নিজের ধারাবাহিকতার রহস্যও ফাঁস করলেন। ‘‘যে কোনও প্লেয়ারের কেরিয়ার নষ্ট হয় চোট-আঘাতের জন্য। আমি এ মরসুমে চেষ্টা করেছি সেই অভিশাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে। ফিটনেস আমার ভাল খেলার একটা বিরাট অস্ত্র।’’   
বলে রাখা ভাল, প্রথম লেগে ৫-০ এগিয়ে থাকার পরে ফেড কাপ ফাইনালে ওঠা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা জেজে-সনিদের। ফিরতি লেগে নিজেদের পাহাড়েও এই বাগানকে ছ’গোল দেওয়ার মুরোদ নেই লাজংয়ের। সঞ্জয়ের কাছে আরও স্বস্তির, প্রীতম কোটালদের ডিফেন্সের রোগ এখন অনেকটা নির্মূল। কোচের অ্যান্টিডোট কাজ করল— কিংশুক আর লুসিয়ানোর মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার টোটকা। পেনরা শুরুতে পরিকল্পনা মাফিক মাঝমাঠ থেকে বল তৈরি তো করলেন, কিন্তু বাগানের ডিফেন্সিভ ব্যারিকেড ভাঙতে পারেননি। গোলকিপার দেবজিৎও চমৎকার। সব মিলিয়ে সুন্দর ফুটবল।
ফেড কাপ জিতলে বোধহয় সবার আগে টিমের থিম সং বদলানো উচিত বাগান কর্তাদের। বাবুল সুপ্রিয়কে অনুরোধ করে গানটা ফের গাওয়ানো যায় কি না দেখতে পারেন তাঁরা!     
উমাপতি-গোষ্ঠ-মান্না-চুনী
বাবলু-ব্যারেটো-(সনি-জেজেও)
যেথা নয়নমণি
বলো কোন ক্লাব জিতলে
খুব বাড়ে চিংড়ির দাম
মোহনবাগান…
মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, কিংশুক, লুসিয়ানো, প্রণয়, ধনচন্দ্র, কাতসুমি, সনি, বিক্রমজিৎ, গ্লেন, জেজে।

No comments:

Post a Comment