মোহনবাগান-৫ : লাজং এফসি-০/ /(জেজে ৪০, ৫১ ও ৫৬, বিক্রমজিত্ ৪৫, আজহারউদ্দিন
৮৭)/
দৃশ্যপট কত দ্রুত বদলায়!
৮৭)/
দৃশ্যপট কত দ্রুত বদলায়!
ডাগআউটে বসে ছটফট করছেন বাঙালি ভদ্রলোক৷ অস্থির পায়চারি৷ চোখেমুখে বিরক্তি৷ হতাশা গ্রাস করেছে বাগান কোচকে৷
সেই সঞ্জয় সেন তৃপ্তির সাগরে ভাসলেন ৪০ মিনিটে৷ 'মিজো ম্যাজিশিয়ান' গোলের আগুন জ্বালাতেই! ৪০ থেকে ৫৬, ফেড কাপের প্রথম সেমিফাইনাল আসলে ১৬ মিনিটের৷ ওই ষোলো মিনিটে হ্যাটট্রিক৷ ওই ষোলো মিনিটে গ্যালারিতে রংমশাল জ্বালিয়ে দেওয়া৷ ওই ষোলো মিনিটেই সুপারস্টার হয়ে যাওয়া জেজে লালপেখলুয়ার৷ পাহাড়ি ঝর্ণা ফিরে দেখলে মিলবে অনেক নাম৷ ভাইচুং ভুটিয়া৷ সুনীল ছেত্রী৷ লালম পুইয়া৷ হঠাত্ করে সাড়া ফেলে হারিয়ে যাওয়া নামও অনেক৷ বহু দিন পর কলকাতা আবার সাক্ষী আর এক পাহাড়ি স্ট্রাইকারের উত্থানের৷ যিনি একাই পাল্টে দিতে পারেন ম্যাচ৷ কোণঠাসা টিমকে ফিরিয়ে আনতে পারেন ম্যাচে৷ অবলীলায় জেতাতে পারেন হ্যাটট্রিক করে৷ রবি রাতে বারাসত জন্ম দিয়ে গেল এক নতুন নায়কের৷
৪০ মিনিটে শুরু জেজের ম্যাজিক৷ বিক্রমজিত্ সিং বল দেন সোনি নর্দেকে৷ হাইতিয়ান বল ধরে স্যামুয়েল সাদাফকে আউটস্টেপে কাটিয়ে শট নেন৷ লাজং কিপার কিথ ফিস্ট করেন৷ ফলো করে গোল জেজের ১-০৷ ৫১ মিনিটে ৩-০ বাগানের৷ জেজের দ্বিতীয় গোল৷ প্রীতমের ফ্রি কিক প্রথমে ক্লিয়ার করেন প্রতিপক্ষ কিপার৷ সোনি ফিরতি বল চিপ করে দেন কিপারের মাথার উপর দিয়ে৷ গ্লেনের আলতো শট গোললাইন পার হওয়ার আগেই জেজের পুশ৷ ৫৬ মিনিটে ৪-০ মোহনবাগানের৷ জেজের হ্যাটট্রিক৷ গ্লেনের পাস থেকে৷
লাজংকে ৫-০ হারানোর পর জেজের মুখে দু'জনের নাম৷ প্রথম জন তাঁর মা হুনপুই৷ মাদার্স ডে-তে মাকে মরসুমের প্রথম হ্যাটট্রিকটা উত্সর্গ করলেন ছেলে৷ দ্বিতীয় জন জাতীয় কোচ স্টিফেন কন্সন্ট্যান্টাইন৷ জেজে বলে গেলেন, 'উনি আমাকে মোটিভেট করেছেন সব সময়৷' একটা প্রশ্নের উত্তর রবি রাতের বারাসত খুঁজতে শুরু করে দিল৷ সুনীল ছেত্রী না জেজে লালপেখলুয়া, কে ভাইচুং ভুটিয়ার যোগ্য উত্তরসূরি? বাগানের হয়ে এই মরসুমে ১৮টা গোল জেজের৷ আই লিগে পাঁচটা৷ এএফসি চ্যাম্পিয়ন লিগে একটা৷ এএফসি কাপে ৬টা৷ ফেডারেশন কাপেও ছ'টা গোল করে ফেললেন তিনি৷ সুনীল ছেত্রী এ বার ততটা জমকালো নন৷ ভাইচুংয়ের মতো 'সেকেন্ড বল' নেওয়ার জন্য জেজের চেষ্টাটা ভীষণ চোখে পড়ার মতো৷
বিশ্ব ফুটবলে গোলের সেলিব্রেশন একটা নতুন ট্রেন্ড৷ গোলের পর সিআর সেভেন মুষ্টিবদ্ধ আস্ফালন৷ আকাশের দিকে দু'হাত তোলেন মেসি৷ জেজের ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশন খুঁজতে গেলে ভুল হবে৷ ক্ষণিকের তৃপ্তি ধরা পড়ে মুখে৷ তার পর ডুবে যান ফুটবলে৷ যেন একটা গোলে খিদে মিটবে না তাঁর! লাজং এফসি এই জেজের কাছে হেরে গেল৷ ম্যাচের পর সঞ্জয়ের গলাতেও প্রশংসা জেজের৷ ম্যাচের সেরাকে নিয়ে বাগান কোচ বলে গেলেন, 'ছেলেটা দুরন্ত ফর্মে আছে৷ ও অনেক দূর যাবে৷'
চল্লিশ মিনিটের আগে ম্যাচটা ছিল পেন ওর্জিদেরই দখলে৷ দু'সপ্তাহে পর পর তিনটে ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে শেষ চারে উঠেছে শিলংয়ের টিম৷ সেই ছন্দেই বাগান বধের রসদ খুঁজছিলেন পেনরা৷ ঝাঁঝ বাড়াতে শুরু থেকেই প্রথম একাদশে উইলিয়ামস৷ তীব্র আক্রমণাত্মক লাজং যে কোনও সময় গোল পেয়ে যেতে পারত ওই সময়৷ তখন প্রণয় হালদার, বিক্রমজিত্ সিং, প্রীতম হালদাররা যেন কাঁপছিলেন৷ ৪০ মিনিটে জেজে লড়াইয়ে ফেরালেন টিমকে৷ পরে জেজে বলছিলেন, 'দ্বিতীয় গোলটা আমার মন ছুঁয়েছে৷ তবে আমার গোল পাওয়াটা বড় ব্যাপার নয়৷ টিম জিতল, সেটাই আসল৷'
মিজো স্ট্রাইকারকে বাদ দিলে আরও দুই গোল লেখা থাকল বাগানের স্কোর লাইনে৷ ৪৫ মিনিটে বিক্রমজিত্ সিংয়ের দুরন্ত শটে ২-০৷ জেজে-গ্লেনের পা ঘুরে বিক্রমের কাছে যায়৷ পাঞ্জাবি মিডিওর বাঁ দিক থেকে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে গোল৷ ৫-০ টা পরিবর্ত আজহারউদ্দিন মল্লিকের৷ সোনি নর্দের মাইনাস থেকে৷ সোনি গোল পেলেন না৷ কিন্ত্ত অন্য
দিনের মতো তিনিও ঝলমলে৷ গ্লেনও গোল পেলেন না৷ কিন্ত্ত তিনটে গোল করালেন৷ ফেড কাপের তিন ম্যাচে এক ডজন গোল দিল বাগান৷
ম্যাচের পর সঞ্জয় বলে গেলেন, 'এএফসি, আই লিগের পর ফেড কাপেও পাঁচ গোল করলাম আমরা৷ তবে ডিফেন্স ভালো খেলেছে৷ এটা স্বস্তির৷' আই লিগটা আসেনি৷ ফেড কাপ ফাইনালটা কার্যত নিশ্চিত করে ফেলল মোহনবাগান৷ শিলংয়ে ৬-০ জিতবেন, পেনরাও হয়তো বাজি ধরবেন না৷ ম্যাচের শেষে বারাসতের গ্যালারিতে জ্বলে উঠল মোবাইলের ফ্ল্যাশ৷ দূর থেকে দেখে মনে হল, অসংখ্য জোনাকি জ্বলছে আর নিভছে৷ জেজে তখন ফেন্সিং ধারে৷মুখে নির্মল হাসি৷ ওই আলোতে মোহাচ্ছন্ন দেখাচ্ছিল মিজোকে!
মোহনবাগান: দেবজিত্, প্রীতম, কিংশুক, লুসিয়ানো, ধনচন্দ্র, কাতসুমি, প্রণয় (লেনি ৬৬), বিক্রমজিত্, সোনি (শৌভিক ৮৮), জেজে , গ্লেন (আজহারউদ্দিন ৬১)
No comments:
Post a Comment