সকাল থেকেই মোহনবাগান তাঁবুর বেঞ্চে ঠায় বসেছিলেন এক বৃদ্ধা। হাতে ধরা সবুজ-মেরুন পতাকাটা কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইছিলেন না। বৌবাজার থেকে নাতনীর হাত ধরে তাঁবুতে আসা অশীতিপর শান্তি চক্রবর্তীর সঙ্গে সেলফিও তুলতে দেখা গেল হাঁটুর বয়সী সমর্থকদের। ফেডারেশন কাপ জয়ের উৎসবের দিনে কাতসুমি ইউসা, দেবজিৎ মজুমদাররা মিলিয়ে দিলেন কয়েক প্রজন্মের মোহনবাগান সমর্থকদের।
উড়ল আবির, পুড়ল বাজি। মুষলধারে বৃষ্টি মাথায় নিয়েও কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দাম নৃত্য, মুহুর্মুহু স্লোগানে বুধবারের বিকেলে ময়দানের রং যেন সবুজ-মেরুন। ‘ভারতসেরা মোহনবাগান’ লেখা বিশাল ব্যানারটা আই লিগ হাতছাড়া হওয়ার পরেই খুলে ফেলা হয়েছিল। সঞ্জয় সেনের দল ফেডারেশন কাপ জেতার পরেই রাতারাতি ক্লাব লনে সাজানো হল নতুন ব্যানার। ফের ভারতসেরা মোহনবাগান।
উৎসবের এমন ফুরফুরে মঞ্চেও অবশ্য মোহনবাগানে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করে রাখলেন কোচ সঞ্জয় সেন। সংবর্ধনার পর তাঁবুতে বসে সঞ্জয় বললেন, ‘‘কর্তাদের কাছ থেকে ১৫ দিন সময় চেয়ে নিচ্ছি। তার মধ্যেই নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।’’ কিন্তু মোহনবাগান শীর্ষ কর্তারা তো আপনাকে কোচ ধরেই নতুন মরসুমে দল সাজাতে চান? সঞ্জয়ের জবাব, ‘‘ফেডারেশন কাপ জিততে না পারলে আমি নিজেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতাম। কারণ আমি বিশ্বাস করি সাফল্য না পেলে সবার চলে যাওয়া উচিত। কর্তারা আমাকে চাইছেন ভাল কথা। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। মহমেডানের কোচ থাকাকালীন ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য দায়িত্ব ছাড়তে দ্বিধা করিনি। পদের মোহ আমার নেই।’’ মোহনবাগান কর্তারা অবশ্য কয়েকদিনের মধ্যেই সঞ্জয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
গত মরসুমে আই লিগ জেতার পর এবার ফেডারেশন কাপ জিতলেন সঞ্জয়। মোহনবাগান কোচ হিসেবে দেশের সেরা দুটো ট্রফি জিতে ফেলেছেন। কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন নিজের সাফল্য? হঠাৎই যেন দপ করে জ্বলে উঠলেন সঞ্জয়। বললেন, ‘‘অনেকেই বলেছিল আমরা চলতি মরসুমে ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারিনি। কিন্তু মনে রাখতে হবে মরসুম শেষে আমরা ভারতসেরা হয়েছি। প্রতিজ্ঞা করছি যদি পরের মরসুমে কোচিং করি তবে দুটো ট্রফি ফের জেতার চেষ্টা করব।’’ হাজার পাঁচেক সমর্থকের গর্জনে ডুবে গেল মোহনবাগান কোচের গলা।
বাঁধভাঙা উৎসব দেখে মোহনবাগান ফুটবলাররাও উচ্ছ্বসিত। সনি নর্ডি ছিলেন না। প্রীতম কোটাল, প্রণয় হালদাররা জাতীয় শিবিরে। বিমানবন্দর থেকে সুসজ্জিত বাসে চড়িয়ে তাঁবুতে আনা হল বাকি ফুটবলারদের। মানস ভট্টাচার্য, প্রদীপ চৌধুরিদের মতো প্রাক্তন ফুটবলাররা সংবর্ধনা দিলেন কর্নেল গ্লেন, কিংশুক দেবনাথদের। ড্রেসিংরুমে সুবিশাল কেকও কাটলেন কোচ-ফুটবলাররা। ভালোবাসার অত্যাচার সামলাতে পিছনের দরজা দিয়ে তাঁবু ছাড়তে হল ফুটবলারদের। উন্মাদনা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন কর্নেল গ্লেন। বললেন, ‘‘দারুণ অভিজ্ঞতা। মোহনবাগানের হয়ে ট্রফি জিততেই কলকাতায় এসেছিলাম। সেই লক্ষ্যপূরণ হয়েছে।’’ ধারাবাহিকতায় সেরা দেবজিৎ মজুমদার বলে গেলেন, ‘‘সমর্থকদের ভালবাসাই আমার প্রেরণা। দলের হয়ে নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই।’’
pic
ফেডারেশন কাপ নিয়ে উচ্ছ্বাস গ্লেন, বিক্রমজিৎদের। (ইনসেটে) সঞ্জয় সেন।—নিজস্ব চিত্র
No comments:
Post a Comment