Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Wednesday, May 25, 2016

যারা ডার্বি জিতল, তারা কী পেল: সঞ্জয় | আজকাল

আজকালের প্রতিবেদন:‌ গুয়াহাটি থেকে বিমান ছাড়ার অনেক আগেই কলকাতা বিমানবন্দরে সবুজ মেরুন জনতার ঢেউ। প্রিয় দলের কোচ–ফুটবলারদের নিয়ে হাজার তিনেক সমর্থকদের গর্জনে কান পাতা দায়। বাতাসে উড়ছিল সবুজ–‌মেরুন আবির। সঙ্গে সবুজ–‌মেরুন পতাকা। কেউ এসেছিলেন বাসে, ট্যাক্সিতে, গাড়িতে। কেউ কেউ বাইক, ম্যাটাডোরে। কেউ পায়ে হেঁটে। মিউজিক সিস্টেম সহ। বিমানবন্দর চত্বর জুড়ে লাউডস্পিকারে ভেসেছে গান— আমাদের সূর্য মেরুন, নাড়ীর যোগ সবুজ ঘাসে....। সবুজ মেরুন সবুজ মেরুন, পালতোলা নৌকা ছুটছে দারুন....। সময় যত গড়িয়েছে বেড়েছে ভিড়।
আই লিগ জয়ের থেকে এদিনের উন্মাদনা একটুও কম ছিল না। তবে ফেডারেশন কাপ জয়ী দল প্রথম উষ্ণ অভিনন্দন পেয়েছিল গুয়াহাটিতে বিমানে পা রাখতেই। অবাক করা ব্যাপার হল, অনুমতি থাকা সত্ত্বেও ট্রফি আনা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। ঠিক ছিল কোচ সঞ্জয় সেনের হাতেই কাপ আসবে কলকাতায়। কিন্তু ট্রফি নিয়ে ট্র‌্যাভেল করা নিয়মবিরুদ্ধ জানানোয় সাময়িক ঝামেলা বাধে মোহনবাগান ও বিমান সংস্থার মধ্যে। বিমান ছাড়তে দশ মিনিট দেরি হয়। ট্রফিটা বিমানের একেবারে শেষদিকে রাখার ব্যবস্থা হওয়ায় আর কোন সমস্যা হয়নি। বিমান কর্তৃপক্ষর তরফে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। এরপর পাইলট অভিনন্দন জানিয়ে ঘোষণা করেন, ‘আমাদের সঙ্গে রয়েছে ফেডারেশন কাপ জয়ী মোহনবাগান। জাতীয় ক্লাবকে অনেক অনেক অভিনন্দন। ওদের ঘরে ফেরা আরও সুখের হোক’। বিমানে তখন হাততালির ঝড়। মনোমালিন্য উধাও। দুপুর দুটোয় কলকাতায় বিমান নামার খবর বাইরে আসতে প্রবল চিৎকার। জনতাকে ঠেকাতে রীতিমতো হিমসিম পুলিশ। সবার আগে দেখা মিলল কোচ সঞ্জয় সেনের। একেবারে নায়কোচিত ভঙ্গিতে হাত নাড়তেই জনতা আরও বেসামাল। সঞ্জয় সেনের নাম ধরে প্রবল জয়ধ্বনি। বাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্যর জনপ্রিয়তায় ভাগ বসিয়ে ফেললেন তিনি। ফুল মালায় বাস সাজানোই ছিল। ফ্লেক্সে লেখা—আবার মোহনবাগান ভারত সেরা। সমর্থকদের ভালবাসার অত্যাচার পেরিয়ে সঞ্জয়রা কোনরকমে বাসে পা দিতেই উঠল প্রবল ঝড়। তাতে কী, সব সুনামি সামলে ট্রফি জয়ের আনন্দকে রোখে কার সাধ্যি? জল ঝড়ের মাঝেই টিম বাসের পেছনে ছুটলেন একদল অত্যুৎসাহী সমর্থক। বাগুইহাটিতে সংবর্ধনা দেওয়ার ভাবনা ছিল স্থানীয় সমর্থকদের। বৃষ্টিতে হয়নি। ক্লাবেও এদিন জনসমুদ্র। স্বপন ব্যানার্জির নেতৃত্বে ক্লাব লনে তৈরি মঞ্চে দলকে সংবর্ধনা জানালেন প্রদীপ চৌধুরী, শিবাজী ব্যানার্জি, বাবু মানি, কৃষ্ণেন্দু রায়, বিদেশ বসু, উলগানাথন, মানস ভট্টাচার্য, প্রসূন ব্যানার্জি, অচিন্ত বেলেল, অমিত ভদ্র, বিশ্বনাথ মন্ডল, সত্যজিৎ চ্যাটার্জি। ক্লাব পতাকা তুললেন কাৎসুমি। অধিনায়ক শিলটন পালের অনুপস্থিতি ভীষণভাবেই নজর কাড়ল। বাগানের সঙ্গে দশ বছরের সম্পর্কটা তাহলে ভেঙেই গেল। সঞ্জয়ের বক্তব্য, ‘এত মানুষের ভালবাসা, আবেগে আপ্লুত আমি। যেখানেই গেছি সমর্থকদের পাশে পেয়েছি। তাই ট্রফি জিতে তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে না পারলে লাভ হত না। আই লিগটা অল্পের জন্য পাইনি, ফেডারেশন কাপ জিতে সেই দুঃখটা মিটল। আবার দায়িত্বে থাকলে প্রতিজ্ঞা করছি, আই লিগ, ফেডারেশন কাপটা জেতার চেষ্টা করব।’ সহ–‌সচিব সৃঞ্জয় বসু বলেন, ‘সঞ্জয় ছিলেন, আছেন, থাকবেন। ওঁর সঙ্গে দিন পনেরোর মধ্যে বসব। আর্থিক সমস্যার মধ্যেও ভাল দল গড়ে সাফল্য পেয়েছি। এবারও সেই ভাবে এগোব। সঞ্জয়দাকে পছন্দের ফুটবলার দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করব। আশা করছি স্পনসর সমস্যা মিটবে।’ অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘অনেকেই বলেন ফেডারেশন কাপ আমাদেরই ট্রফি। সেটা ঠিক নয়। এটা খেলে অর্জন করতে হয়।’ এমন দিনেও আই লিগের দুঃখ সঞ্জয়ের। বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে, নির্বাসিত না হলে ওই ম্যাচগুলোয় পয়েন্ট নষ্ট হত না। বিশেষ করে লাজং ম্যাচে শেষ ২০ সেকেন্ডে গোল হজমটা হয়ত ঠেকানো যেত। নর্ডির না থাকাটাও বড় ফ্যাক্টর। ব্যক্তিগত দক্ষতায় অনেক ম্যাচ বের হয়ে যায়। তখন বলিনি বাকিরা দুঃখ পাবে বলে।’ কিন্তু মরশুমে একটা ডার্বিও জেতেননি। ফোঁস করে উঠলেন সঞ্জয়। বলেন, ‘আমার কাছে ডার্বির আলাদা গুরুত্ব নেই। সমর্থকদের আবেগ থাকবে এটা নিয়ে। গতবার ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে আই লিগ জিতে ভাল লেগেছিল। কিন্তু এবার ট্রফি জেতাটা অনেক জরুরি ছিল। যারা ডার্বি জিতল তারা পেল কী?’ আপাতত কয়েকদিন বিশ্রাম চান। ছেলের ভর্তির ব্যস্ততার পাট চুকিয়ে পরিবারের সঙ্গে কিছুদিন বেড়িয়ে আসতে চান। তারপরই আলোচনায় বসবেন কর্তাদের সঙ্গে। বলেন, ‘প্রস্তাব ভাল হলে, মনোমত দল পেলে কাজ করতে অসুবিধা নেই।’ আই এস এলের অফার নেই। আগ্রহীও নন। বলেই দিলেন, ‘‌এই আবেগ, উন্মাদনা, ভালবাসা আই এস এলে কোথায়? টাকার সঙ্গে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের আবেগ, ঐতিহ্যকে মিলিয়ে ফেললে চলবে না। এদের জায়গা সবসময় আলাদা।’‌‌‌

No comments:

Post a Comment