ফেড কাপ জেতার পর দেড় ঘণ্টাও পেরোয়নি। সবুজ আবির, ফুটবলারদের উন্মাদনার ছোঁয়া সবই এখনও গায়ে লেপ্টে আমার। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, আমার ছেলেরাই ভারত সেরা।
আনন্দবাজারের জন্য বিশেষ কলাম লিখতে বসে না জানি এই দু’বছর মোহনবাগানের কোচ থাকার কত স্মৃতিই ভিড় করে আসছে মনে! ক্লাবের ভাল-মন্দ সবটার সঙ্গেই তো জড়িয়ে পড়েছি। তবে একটা কথা স্বীকার করতে এতটুকু দ্বিধা নেই, এই সাফল্য আমার নয়। আমার ছেলেদের সাফল্য এটা।
ভাবতে পারেন, এই চূড়ান্ত পেশাদার জগতেও বেতন না পেয়েও ট্রফির জন্য মরিয়া হয়ে লড়াই করছে দেশের সেরা টিমের ফুটবলাররা! জানি না ওদের কার কত মাইনে বাকি রয়েছে। তবে যা-ই বাকি থাকুক, ওরা কিন্তু মাঠে নেমে সে কথা মনে রাখেনি। সব সময় সেরাটাই দিয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে স্পনসর না থাকলেও, ভালবাসা আর ইচ্ছে থাকলে সাফল্য পাওয়া যায়। ক্লাবকর্তারাও যে ভাবে লড়াই করেছেন টিমটাকে বাঁচিয়ে রাখতে, সেটাও তো কারও অজানা নয়।
কলকাতা লিগ নিয়ে বরাবরই আমার মাথাব্যথা ছিল না। কারা হেক্সা লিগ খেতাব জিতল সে সব আমার কাছে অর্থহীন। মরসুমের শুরু থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল, আই লিগ এবং এএফসি টুর্নামেন্ট। তখনও ফেড কাপ হবে জানতাম না। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আই লিগ হাতছাড়া হওয়ায় ছেলেরা স্বভাবতই ভেঙে পড়েছিল। সে সময় ওদের নানা ভাবে চাঙ্গা করতে হয়েছে। দিনের পর দিন আলাদা করে কথা বলেছি। ওদের সমস্যার কথা জেনেছি। আমার টিমের ডিফেন্স নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। প্রীতম, ধনচন্দ্রদের বসিয়েও দিয়েছি। তবে লড়াই থেকে হারিয়ে যেতে দিইনি। সব সময় ওদের বলতাম, লড়াই করেই কিন্তু জায়গাটা ফেরত নিতে হবে তোমাদের। না হলে সেটা আসলে আমারই হার হবে তোমাদের শিক্ষক হিসেবে। সেই ধনচন্দ্রই তো আজ ফাইনালে গোল করল। আমার ডিফেন্স একটাও গোল খেল না!
আমি তিনটে জিনিসে বিশ্বাস করি— এক) সততা, দুই) স্পষ্টবক্তা হওয়া, তিন) টিমগেম। স্পষ্টবক্তা হওয়ার জন্য অবশ্য অনেক সময় নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে, শাস্তি পেতে হয়েছে। তবে নিজের মেরুদণ্ড ঠিক না থাকলে মোহনবাগানের মতো বড় টিমের দায়িত্ব সামলাব কী ভাবে? আর সততা ছাড়া সাফল্য পাওয়া অসম্ভব। টিমগেমের বড় উদাহরণ ফেড কাপ ফাইনাল। সনি, জেজে, বিক্রমজিৎ, ধনচন্দ্র সবাই মিলেই তো জেতাল। কারও একার কৃতিত্বে জেতেনি মোহনবাগান।
মনে আছে, গত বার এই ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ছিল ফেড কাপ। সেই টুর্নামেন্টে মুখ থুবড়ে পড়েছিল আমার টিম। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অবশ্য হাজার হাজার সদস্য-সমর্থকের সেই দুঃখ ঘুচে গিয়েছিল। কিন্তু আমার মনে কোথাও একটা কাঁটা সারাক্ষণ খচখচ করত। শনিবার রাত থেকে সেটা করবে না। ফেড কাপ জিতে যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল আমার বাগান কোচের চেয়ারে। এখন বলতেই পারি, সব ভাল যার শেষ ভাল!
No comments:
Post a Comment