মোহনবাগান- ৫ : আইজল এফসি- ০/ /(সোনি ৪৮, ধনচন্দ্র ৫৯, জেজে ৭৩, ৮৮, বিক্রমজিত্ ৮২)
'রোয়ানু' ঘুরে বাংলাদেশে চলে গেল৷ আবহাওয়া দপ্তর সে কথা বললেও আসলে কিন্তু তা হয়নি৷ এই ঘূর্ণিঝড় আসলে শনিবার রাতে আছড়ে পড়ল গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে৷ সোনি-জেজে-কাতসুমি-গ্লেনের তোলা সেই ঝড়ে বিধ্বস্ত হল আইজল এফসি৷ ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে ৫-০ জয়ের পর ফাইনালেও ৫-০ জয় পেল সঞ্জয় সেনের
টিম৷ ফেডারেশন কাপে যা আগে কখনও হয়নি৷
একঝাঁক বাঙালির এভারেস্ট জয়ের দিনেই পাহাড় জয় করে দেশের এক নম্বর নক আউট টুর্নামেন্টে জিতে ভারতসেরার ট্রফি তুলে নিল মোহনবাগান৷ ফেডারেশন কাপ জয়ে 'তেরোর গেরো' কাটাতে লাগল পাক্কা আট বছর৷ আর বাঙালি কোচের হাত ধরে গঙ্গা পারের ক্লাবে এই ট্রফি এল ১৫ বছর পর৷ ২০০১য়ে সুব্রত ভট্টাচার্যের কোচিংয়ে এই ট্রফি জেতার পর যে দু'বার বাগানে এই ট্রফি এসেছিল তা এনেছিলেন রবসন ও করিম বেনশারিফা৷ চেতলার বাসিন্দা সঞ্জয় এ বার সুব্রত, সুভাষের পর একসঙ্গে আই লিগ ও ফেডারেশন কাপ পেলেন৷ ভূপেন হাজারিকার রাজ্যে 'আমি এক যাযাবর' হিসেবে ঘুরে বেড়ানো ফুটবল-যাযাবর কোচ জহর দাসের জীবনটা বদলাতে পারত৷ যদি তিনি ম্যাচটা জিততেন৷ কারণ ১৯৮১ সাল থেকে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোচিং করালেও তিনি বড় সাফল্য পাননি কখনও৷ এ দিন তাঁর কোচিংয়ে আইজল যথেষ্ট ভালো ফুটবল খেলে প্রথমার্ধে৷ কিন্ত্ত দ্বিতীয়ার্ধে বাগান-ঘূর্ণিতে তাঁর টিম হারিয়ে গেল৷ আই লিগে তিনি মোহনবাগানকে ছিটকে দিলেও এ বার তার বড় শোধ তুলে নিল সঞ্জয় সেনের টিম৷
যেন বেঙ্গালুরুর মাঠে বেঙ্গালুরু এফসিকে হারিয়ে ৩৫৫ দিন আগে আই লিগ জয়ের পরিবেশই এ দিন ফিরে এসেছিল গুয়াহাটিতে৷ সে দিনের মতো এ দিনও তো বৃষ্টিভেজা পরিবেশেই আনন্দাশ্রুতে ভেসে গেলেন সোনি-গার্সিয়া-জেজেরা৷
মোহনবাগানকে সমর্থন করতে সল্টলেক, হাওড়া, হুগলি থেকে কিছু সমর্থক এসেছেন গুয়াহাটিতে৷ ম্যাচের আগে নৈহাটি থেকে আসা জনা কুড়ি তরুণ-কিশোর তো মাঠের বাইরে ড্রাম পিটিয়ে 'হাইল্যান্ড রাইনোজ' সমর্থকদের কোণঠাসা করে রাখলেন৷ দু'পক্ষের মারামারির ভয়ে কার্বাইন হাতে আধা সামরিক বাহিনিকেও দৌড়োদৌড়ি করতে দেখা যায়৷ ম্যাচের ৭০ মিনিটের পর অবশ্য পাহাড়ি-গন্ডাররা শিং লুকিয়ে মাঠ ছাড়লেন৷ তখন গ্যালারি জুড়ে শুধুই সবুজ মেরুণ৷
প্রথমার্ধে মোহনবাগানের তিনটে ভালো আক্রমণ ছিল৷ কিন্ত্ত জেজে, সোনি ও গ্লেনের চেষ্টা আটকে দেন আইজল কিপার পোইরে৷ গোল না পেলেও মোহনবাগান খেলায় ছন্দপতন ঘটাতে দেয়নি৷ বল ধরে ডাউন দ্য মিডল আক্রমণের চেষ্টা তারা চালিয়ে গিয়েছে তারা৷ বিরতির পর প্রথম গোলটা সেই আক্রমণেরই ফসল৷ বিক্রমজিতের লব আইজলের ৬ গজ বক্সের মাথায় বুকে করে নামিয়ে দিলেন জেজে৷ পিছন থেকে ছুটে এসে সেই বল হালকা পুশে জালে জড়ালেন সোনি নর্দে (১-০)৷ পরের গোলটাও বহু প্র্যাক্টিসের ফসল৷ কাতসুমি বা নর্দে কর্নার করলে সাধারণত পিছন থেকে লুসিয়ানো উঠে আসেন৷ এ দিনও লুসিয়ানো এলেন কাতসুমির কর্নারে৷ তবে লুকোনো অস্ত্র হিসেবে তাঁর পিছন পিছন চলে এলেন ধনচন্দ্র৷ কাতসুমি কর্নার তুলতেই লুসিয়ানো দুই মার্কার নিয়ে সরে গেলেন৷ ধনচন্দ্র হেডে গোল করে
গেলেন (২-০)৷ আইজলের রক্ষণ এরপর পুরোপুরি ধসে যায়৷ জেজে করেন দুটো গোল৷বিক্রমজিত্ একটা৷ জেজে আট গোল করে ফেডারেশন কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতাও হলেন৷
জেজে-সোনিরা যেমন গোল করে নায়ক, তেমনই আরও চার বঙ্গসন্তানের কথাও বলতে হবে ফেডারেশন কাপ জেতার নায়ক হিসেবে৷ প্রীতম-প্রণয় যথারীতি ধারাবাহিক৷ দেবজিত্ বেশ কয়েকবার সেভ-জিত্ হয়ে উঠলেন৷ কিংশুক স্টপারে দুরন্ত৷ লুসিয়ানোর বেশ কয়েকটা ভুল ঢেকে দিলেন তিনি৷ এই ভুলগুলো থেকে গোল খেয়ে গেলে চাপে পড়ে যেতে হত বাগানকে৷ এই শহরেই রয়েছেন জাতীয় কোচ স্টিফেন কন্সস্ট্যান্টাইন৷ কিন্ত্ত তাঁকে মাঠের আশেপাশে দেখা যায়নি৷ যদি টিভিতে ম্যাচটা দেখেন, তাহলে হয় তো কিংশুক-দেবজিত্কে জাতীয় টিমে বারবার না নেওয়ার জন্য তিনি অনুতপ্ত হতে পারেন৷
সঞ্জয় বরাবরই বলে এসেছেন তাঁর টিম স্পিরিটের কথা৷ এ দিন সে কথাটাই প্রমাণ হয়েছে প্রতি পদে৷ টিমের শেপ কখনও বদলায়নি৷ পরিবর্ত আজহার একদম শেষে নেমেও গোল করালেন জেজেকে দিয়ে৷ জয়ের পর কৃতিত্বটা সকলেই ভাগ করলেন একে অপরের জন্য৷ সোনি বলেন গেলেন, 'টিমটা একটা পরিবার ছিল৷ তাই আই লিগে হেরে গেলেও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়ে ফেডারেশন কাপ পেলাম৷ এটা কারও ব্যক্তিগত কৃতিত্বে আসেনি৷'
এটাই তো টিম স্পিরিট৷
মোহনবাগান: দেবজিত্, প্রীতম, লুসিয়ানো, কিংশুক, ধনচন্দ্র, কাতসুমি, বিক্রমজিত্, প্রণয়, সোনি, জেজে, গ্লেন (আজহার)৷
No comments:
Post a Comment